১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

মাদারীপুরে খোঁজ নেই দেড় হাজার প্রবাসীর, আতঙ্কে এলাকাবাসী

আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

মাদারীপুর: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে মাদারীপুরে এসেছেন ৩ হাজার ৪২৬ প্রবাসী। কিন্তু এদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা গেছে মাত্র ১ হাজার ৩৫৯ জনের। বাকিরা লাপাত্তা। পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজেও তাদের পাসপোর্টে দেওয়া ঠিকানায় পাচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জেলা পুলিশ ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত ইতালি, বুলগেরিয়া, জাপান, গ্রিস, রোমানিয়া, স্পেন, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ওই সংখ্যক প্রবাসী মাদারীপুরে আসেন। গত শনিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫৯ জনকে খুঁজে বের করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ৮৮৮ জনের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ায় সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪৭১ জন। বাকিরা যে নাম-ঠিকানা ব্যবহার করেছেন, সেখানে গিয়ে পাওয়া যায়নি।
সারা দেশে করোনা শনাক্তদের মধ্যে ১০ জন মাদারীপুরের। এদের মধ্যে ৯ জনই শিবচর উপজেলার বাসিন্দা। এ উপজেলায় ২৫ মার্চ পর্যন্ত আট শতাধিক প্রবাসী এসেছেন। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে উপজেলার কিছু এলাকায় চলাচল সীমাবদ্ধ করেছে প্রশাসন।
এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. আবদুল হান্নান বলেন, প্রবাসীদের খুঁজে বের করতে আমরা রাত-দিন কাজ করছি। অনেকেই ভুল তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট করায় পাওয়া যাচ্ছে না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, রাজৈর উপজেলায় ২০৬ প্রবাসীর নাম পেয়েছি। এদের মধ্যে ২০৩ জনকে পাসপোর্টের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। এ তালিকা আমরা পাসপোর্ট অফিসে পাঠাব। সেখান থেকে হয়তো তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, তিন হাজারের বেশি প্রবাসী জেলায় এলেও অর্ধেকের বেশি নিখোঁজ। তাদের সন্ধানে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চলছে।
তিন জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ১৪২, মুক্ত ৫৮৭ জন :  তিন জেলায় ১৪২ জন নতুন হোম কোয়ারেন্টাইনে, মুক্ত হয়েছে ৫৮৭ জন। এরমধ্যে সুনামগঞ্জে বিভিন্ন উপজেলায় নতুন করে আরও ২৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে রইলেন ৫৭৯ জন। এরমধ্যে ৩০৪ জনকে ছাড়পত্র দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় নতুন ৫২ জনসহ মোট ৪১৩ জন হোম  কোয়ারেন্টাইনে আছেন। রোববার সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জন নতুন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে এসেছেন। এদের মধ্যে সদরে ৬ জন, লোহাগড়ায় ১৫ জন ও কালিয়ায় ৩১ জন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ৬১ জন প্রবাসীকে নতুন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আর ১৪ দিন সফলতার সঙ্গে হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করে মুক্ত জীবনে ফিরে গেছেন ৫৭ জন। এদের মধ্যে ৫৫ জন নিজ নিজ বাড়িতে আর ২ জন প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন।
নাটোর জেলায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা মোট ৪৫৫ ব্যক্তির মধ্যে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে ২২৬ ব্যক্তি কোয়ারেন্টাইন মুক্ত হয়েছেন। অবশিষ্ট ২২৯ ব্যক্তি বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
এদিকে চট্টগ্রামের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে প্রবাসীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদারকি করছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ইলিয়াস হোসেন। রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকদের তদারকি ও খোঁজ খবর নিতে বেশ কয়েকটি বাড়িতে যান তিনি। জেলা প্রশাসক জানান, চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমানে ৯৪৭ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এরমধ্যে নগরের খুলশী এলাকায় প্রায় ৭০ জন রয়েছেন।
এদিকে টাঙ্গাইলে করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র লোকজনদের খাদ্য সহায়তার জন্য টাঙ্গাইলের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একদিনের বেতন দুর্যোগকালীন তহবিলে জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম।
তিন জেলায় ৫ জন আইসোলেশনে: জয়পুরহাটের কালাইয়ের নান্দাইল দিঘিতে এক  পরিবারের ৪ সদস্যকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই পরিবারের সংস্পর্শে আসা ১১ জনকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শরীয়তপুরের জাজিরায় এক গৃহকর্মীকে (২১) আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। রোববার সকাল ১০টায় ওই গৃহকর্মী আউটডোরে ঠাণ্ডা, জ্বর ও কাশি নিয়ে চিকিৎসা নিতে এলে সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আইসোলেশনে রাখা হয়। পরে রাত ৮টায় আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রাত ১২টায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network