আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১
আপটেড নিউজ ডেস্ক: অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করাকে ইসলাম চরম ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করবে না। মানুষের সম্পদের কিছু অংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে দখল করার উদ্দেশ্যে আদালতে মামলা দায়ের করবে না।’- সূরা বাকারা :১৮৮
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কিছু জবরদখল করল সে আমার উম্মত নয়।’ রাষ্ট্র্র, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি_ যে কারও সম্পদ স্বীকৃত নিয়মের বাইরে নিজের ভোগে নেওয়াকে আত্মসাৎ বলা হয়। সব ধরনের আত্মসাৎ ইসলামে নিষিদ্ধ।
অন্যের সম্পদ দখল করা আর জাহান্নামের টিকিট বুকিং দেয়া এক জিনিস। রাসূল সা: বলেছেন, কারো এক বিঘত সম্পদ যদি কেউ আত্মসাৎ করে তাহলে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তার গলায় সাত স্তবক জমিন ঝুলিয়ে দেবেন। ধসাতে থাকবেন তাকে। অন্য সাধারণ গুনাহ করলে বা আল্লাহর হকের সাথে জড়িত কোনো হুকুম লঙ্ঘন করলে এত বড় সমস্যা নেই যত বড় সমস্যা মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করলে রয়েছে। কারণ এটি বান্দার হক। আর বান্দার হক নষ্ট করলে সেটি আল্লাহ নিজে মাফ করবেন না। কিন্তু আল্লাহর হক নষ্ট করলে চাইলে আল্লাহ মাফও করতে পারেন, আবার শাস্তিও দিতে পারেন।
দুনিয়াতে যদি আপনি কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেন, কৌশলে নিজের নামে লিখিয়ে নেন, আইল ঠেলে জায়গা বাড়িয়ে নেন, বিদেশ থেকে ভাই টাকা পাঠিয়েছে আপনি কৌশলে সেই টাকা নিজের নামে জমা করেন, এগুলো হারাম। এই আত্মসাৎ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। কিয়ামতের ময়দানে বাবা-ছেলে কেউ কাউকে চিনবে না।
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের এমন কিছু কাজ আছে, যা সামান্য মনে হলেও ওই সব কাজ আত্মসাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই ওই সব কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকা দরকার। যেমন অফিসের কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া গাড়ি পারিবারিক কাজে ব্যবহার, অফিসের কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া টেলিফোনে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা, অফিসের খাতা-কলম বাসায় এনে সন্তানদের লিখতে দেওয়া, টেন্ডার থেকে কমিশন গ্রহণ করা, যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিনা ভাড়ায় যানবাহনে যাতায়াত করা, জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে বেতনভুক্তভাবে কাজ করে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে বখশিশ নেওয়া। চাঁদাবাজি, ধোঁকাবাজি, প্রতারণামূলক দালালিসহ আমাদের সমাজে আরও অনেক পদ্ধতি আছে, যা ইসলাম, প্রচলিত আইন ও বিবেক_ সবকিছুর দৃষ্টিতে অন্যায়। এসব পদ্ধতিতে উপার্জিত সুবিধা, সম্পদ, সেবা ইসলামের পরিভাষায় হারাম। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ আদেশ করেছেন, ‘হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং পবিত্র আছে তা থেকে খাও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’- সূরা বাকারা :১৬৮
এমন বাছ-বিচারহীন উপাজর্নকারীদের সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মানুষ হারাম মাল উপার্জন করে তা থেকে দান করলে তার দান কবুল করা হয় না, নিজের প্রয়োজনে খরচ করলে তার খরচে বরকত দেওয়া হয় না, মরার সময় রেখে গেলে এটা তার জাহান্নামের শাস্তি বাড়ায়। হারাম মাল দান করার কারণে মহান আল্লাহ গুনাহ মার্জনা করেন না। বরং হালাল মাল দান করার কারণে গুনাহ মার্জনা করেন।’ -আহমাদ
এমন অনেক লোক আছে, যারা দেশকে ফাঁকি দিয়ে, জনগণের ওপর জুলুম করে সম্পদের পাহাড় গড়ে শেষ জীবনে হজ পালন করে হাজি কিংবা ধার্মিক হয়ে যায়। সমাজের কাছে তারা এসব হলেও আল্লাহর কাছে তাদের কোনো মূল্য নেই। এক হাদিসে নবী (সা.) তাদের বিষয়েই বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি দশ টাকা দিয়ে একটি কাপড় কিনল। তাতে একটি টাকা হারাম ছিল। তাহলে এ কাপড় গায়ে থাকা অবস্থায় তার নামাজ কবুল হবে না।’