২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

কোরআন রেখে হনুমানের গদা নিয়ে পুকুরে ফেলে দেন ইকবাল

আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক: পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল হোসেন কুমিল্লার নানুয়াদিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার কথা স্বীকার করলেও এ ঘটনার আরও বিস্তারিত জানতেই এ আসামিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৩ অক্টোবর) কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় ইকবালসহ চার আসামির ১০ দিন করে রিমান্ড চাইলে শনিবার দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিথিলা জাহানের আদালতে সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- মণ্ডপে কোরআন পাওয়ার তথ্য ৯৯৯-এ কল করে জানানো ইকরাম হোসেন এবং নগরীর শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী (রা.) মাজারের সহকারী খাদেম হুমায়ুন আহমেদ ও ফয়সাল আহমেদ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ বলেন, ‘পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল মণ্ডপে কোরআন রাখার কথা স্বীকার করেছেন। ঘটনার বিস্তারিত জানতে ইকবালসহ চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মণ্ডপে কোরআন রাখার পর হনুমানের গদা নিয়ে ইকবালের চলে যাওয়ার দৃশ্য এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। ইকবাল গদাটি পরে একটি পুকুরে ফেলে দেন।’ তবে পুকুরটির অবস্থান সুনির্দিষ্ট করে জানাননি পুলিশের এ কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোরআন রাখার পর এ নিয়ে হওয়া সহিংসতার সময়ও ইকবাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তার পেছনে আরও কারা আছে, আমরা খতিয়ে দেখছি। সহিংসতার পর ইকবাল প্রথমে কুমিল্লা থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম পৌঁছান। সেখান থেকে বিভিন্ন বাহনে করে কক্সবাজারে যান।’

ইকবালকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাতে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে তাকে কুমিল্লায় আনা হয় এবং সেখানে পুলিশ লাইন্সে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জানা গেছে, ইকবাল হোসেন কুমিল্লা নগরীর পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ সংগ্রহ করে নানুয়াদিঘির পাড় পূজামণ্ডপের হনুমানের কোলে রাখেন। বিষয়টি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত হয়।

এ ঘটনায় ১৭ মিনিটের এক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন রাতে ইকবাল হোসেন মাজার সংলগ্ন মসজিদে রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে প্রবেশ করেন। পরে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় মসজিদে দুই জন মুসল্লি ছিলেন। আবার রাত ২টা ১২ মিনিটে মসজিদের একটি বাক্স থেকে কোরআন নামিয়ে ফ্লোরে রেখে বের হয়ে যান। সর্বশেষ রাত ২টা ১৭ মিনিটে আবারও মসজিদে গিয়ে কোরআন হাতে বের হয়ে আসেন ইকবাল।

ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত ১২টি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে মণ্ডপে কোরআন রাখা যুবক ইকবাল হোসেন বলে নিশ্চিত হলেও এর নেপথ্যে কে বা কারা- সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ইকবাল সুজানগরের নুর আহমেদ আলমের বড় ছেলে। বাবা-মায়ের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ইকবাল সবার বড়। এলাকায় ‘ভবঘুরে’ হিসেবে পরিচিত এ যুবক প্রায়ই নেশা করতেন। নেশার টাকার জন্য পরিবারের লোকজনের ওপর ক্ষিপ্ত হতেন। কখনও বাস চালকের সহকারী, কখনও রঙ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করলেও নেশা করায় তাকে কেউ কাজে রাখতে চাইতো না। প্রথম বিয়ে করেন বরুড়ায়। পাঁচ বছর আগে সেটি বিচ্ছেদ হয়। সেই সংসারে তার এক ছেলে রয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ে করেন চৌদ্দগ্রামের কাদৈ গ্রামে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দ্বিতীয় স্ত্রীও তাকে ছেড়ে গেছেন। আদালতে ইকবালের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। সেই সংসারে তার একটি মেয়ে আছে।

গত ১৩ অক্টোবর নানুয়াদিঘির পাড় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় কুমিল্লা নগরের কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়া জেলার সদর দক্ষিণ ও দাউদকান্দির দুটি মণ্ডপে হামলা হয়। এর জেরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুইটি, দাউদকান্দি ও দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা হয়। এসব মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৮ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network