২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার প্রাচীন ফাঁদ বড়শী কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে 

আপডেট: জুন ২৮, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গ্রাম বাংলার মেঠোপথ ধরে চলার পথে হঠাৎ কোন হ্যাচকা টানের শব্দ অথবা চোখের সামনে ধরা পরে কোন নিরব শিকারী বড়শী হাতে পুকুর-খাল অথবা বাড়ীর পাশের পতিত কোন জলাশয়ের পাশে চুপচাপ বসে আছে ছিপ কেঁপে ওঠার আশায়। চুবা বা ডুবা কেঁপে উঠলেই আচমকা বড়শীতে টান দেয়, তখন হয়তো উঠে আসে বাহারী কোন রুপালী রঙের মাছ। জলাশয়ের পানির নীচে ঘুরে বেড়ানো কোন মাছ খাবারের খোঁজে সামনে লোভনীয় টোপ দেখে বড়শীতে গাঁথা খাবার ঠোঁকর দিলে পানির উপরে ভাসা চুবা বা ডুবা নড়ে উঠে। একে স্থানীয় ভাষায় পোটায় বলা হয়। তখন মাছ শিকারী বুঝতে পারে যে মাছ এসেছে। তখন সে হ্যাচকা টান দিলে মাছের মূখে বা কানে বড়শীর তীক্ষ্ণ ফলা গেঁথে যায়। তখন সহজেই এটি শিকার করা যায়। নগর সভ্যতার বেড়াজালে দিনে দিনে জলাশায় বা পুকুর কমতে থাকলেও এখন যা অবশিষ্ট আছে তাতে এখনো নিয়ম করে চলে ছিপ-বড়শী আর মাছের খেলা। শুধু টোপ, বড়শী আর ছিপই নয় মাছ শিকারে কঠিন অধ্যাবসায় আর অপরিসীম ধৈর্যও থাকতে হয়। এই কাজে যারা অভিজ্ঞ তারা জলশয়ের অবস্থা এবং পরিবেশ বুঝে প্রথমে বসার জায়গা নির্ধারন করে মাছের আকর্ষণ করার জন্য বিশেষ ধরনের চারি (মাছের খাবার) ব্যবহার করা হয়। তারপর টোপ, চুবা, ছিপ পানিতে ভেসে থাকা সেই চারির কাছাকাছি পাতা হয়। মাছ চারির ঘ্রানে সেগুলো খাওয়ার জন্য ছুটে এলে ভূল করে বড়শীতে গাঁথা খাবার গিলে ফেলে তখন শিকারী হ্যাচকা টান দিলে মাছ আটকে যায়। এই মাছ ধরার ফাঁদ বা বড়শী গ্রাম বাংলার সাধারন নিম্নবিত্ত পরিবারের জনগন থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরাও বড়শী দিয়ে মাছ শিকার করতো। বড়শী দিয়ে মাছ শিকারী ইউনুস জানান, ছোটবেলা থেকেই শখের বশে নিজে বড়শী দিয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি এর সরঞ্জাম ও তিনি বিক্রি করেন। নানা ধরনের ছোট বড় মাছের জন্য বিভিন্ন রকমের বড়শী, ছিপ, চুবা, সুতা, হুইলার ইত্যাদি তিনি বিক্রি করেন। ধরন অনুযায়ী একেকটার একেক রকমের দাম। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের কেউ কেউ বড়শী দিয়ে ছোট ছোট মাছ যেমন- টাকি, পুঁটি, শোল, ঘুইঙ্গা, বাইন, কৈ ইত্যাদি ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালায় আবার কেউ বড় বড় পুরনো পুকুর -দীঘিতে সৌখিন ভাবে দলবদ্ধ হয়ে টিকেট কেটে বড় মাছ ধরে। কেউ মাছ ধরে পেটের তাগিদে আর কেউ মাছ ধরে সৌখিনতার জন্য তবে সবগুলোরই মাধ্যম কিন্তু বড়শী। কালের বিবর্তনে ও আধুনিকার ছোঁয়ায় বর্তমানে চাষাবাদের জমি সহ যত্রতত্র কীটনাশকের প্রয়োগ এবং খাল-বিল-পুকুর সহ অন্যান্য জলাশয় ভরাটের কারনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রাচীন মাছ ধরার বড়শী।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network