২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

মানবতার ফেরিওয়ালা ‘কৃষ্ণ’ এখন অসহায়!

আপডেট: জুলাই ১৯, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

বরগুনা প্রতিনিধি: ‘প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে, জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে।’ কালজয়ী গানটির সঙ্গে বরগুনার বেতাগী উপজেলার পত্রিকার হকার কৃষ্ণ কান্ত বাড়ৈ ওরফে কৃষ্ণের জীবনের গল্প অনেকটাই মিলে যায়।
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে কৃষ্ণ প্রতিদিন দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে খবরের কাগজ। সেই কাগজের পাতায় পাতায় কত খবরই ছাপা হয়। থাকে না শুধু কৃষ্ণের দুর্দিনের গল্প।

বেতাগী উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের বদনীখালী গ্রামের দিনমজুর ধীরেন চন্দ্র বাড়ৈর ছেলে কৃষ্ণ কান্ত বাড়ৈ ৭ বছর বয়সে একদিনের ব্যবধানে বাবা-মাকে হারায়। এরপর থেকেই কৃষ্ণ ও তার বড় ভাই শংকর বাড়ৈর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বলতে ছিল মাত্র ৪ শতাংশ জমি ও একটি ছোট ঘর।

ওই সময় বেঁচে থাকার জন্য দুই শিশু দিনমজুরের কাজ শুরু করে দেয়। কাজ না পেলে ভিক্ষা করে কিংবা কারো কাছে সাহায্য চেয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকে। কৃষ্ণর বয়স যখন ৯ বছর- তখন খবর কাগজ বিক্রি করার জন্য বেতাগী পৌর শহরে চলে আসে। খবরের কাগজ বিক্রি করে মাসে তিন হাজার টাকা উপার্জন করে। এরপর দেখতে দেখতে কেটে যায় ২০টি বছর। ৭ বছর আগে কৃষ্ণের হাড় ক্ষয় রোগ দেখা দেয়। এরপর কিছু মানুষ সাহায্য করলে সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা নেয় কৃষ্ণ। তবে এখন টাকার অভাবে নিয়মিত ওষুধ কিনে খেতে পারছে না। অসুখের কারণে ভালোভাবে হাঁটতেও পারছে না।

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে খবরের কাগজের মাধ্যমে প্রতিদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে শত শত খবর পৌঁছে দেয় অসহায় কৃষ্ণ। সঠিক সময় খবরের কাগজ দিয়ে সবাইকে খুশি করে সে। এ কাজে সে আনন্দ পায়। কিন্তু নিজের জীবনের খবরটাই সে অনেক সময় ভুলে যায়।

কৃষ্ণ বলে, ‘সবার কথাই তো ল্যাখেন, মোর দুঃখের কথা একটু লেইখ্যা দিতে পারেন না? মুই তো এহ্যোন নানান অসুখ-বিসুখের মধ্যে আছি। মোরে তো কেউ সাহায্যও করে না।’

কৃষ্ণ আরও বলেন, ‘ট্যাকার অভাবে এহোন আর ওষুধ খাইতে পারি না। বর্তমানে লকডাউনে পেপারও বেচতে পারি না। এ্যাহন মুই অসহায়। মোরে কেউ যদি একটা রিকশা কিনে দেয় তয় পেপারগুলো মুই ভালোভাবে দিতে পারতাম।’

বেতাগী প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, কৃষ্ণ একজন সৎ মানুষ। দিনরাত পরিশ্রম করে সে সংসার চালায়। কৃষ্ণকে সাহায্যের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার।

কৃষ্ণ সম্পর্কে বেতাগী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. লুৎফার রহমান ফিরোজ বলেন, কৃষ্ণকে এর আগে বিভিন্ন সময় সাহায্য করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network