১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

পিরোজপুরে নারিকেল পাতার ঘরে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

আপডেট: জুলাই ১৭, ২০২১

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

পিরোজপুর প্রতিনিধি: একটি বসতভিটার ওপর দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি বাঁশের খুঁটি। চারদিকে প্রায় খোলামেলা। তবে খুঁটির ওপর নারিকেল পাতা ও প্লাস্টিক দিয়ে ছাউনি তৈরি করে বছরের পর বছর ধরে বসবাস করছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার।
পিরোজপুরের মাটিভাঙ্গা ইউপির বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ শেষে এই ভিটেই ছিল তার শেষ জীবনের প্রাপ্তি। তার পরিবারের থাকার জায়গাও এটি। এরপরও অসচ্ছল এই পরিবারকে সরকারি ঘর বরাদ্দের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আর জেলা প্রশাসন বলছে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পরবর্তী ঘর বরাদ্দ এলেই তাকে দেওয়া হবে।

জানা যায়, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গার পূর্ববানিয়ারী গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের পরিবার প্লাস্টিক ও নারিকেল পাতা দিয়ে ছাউনি তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন একটি ভাঙা ঘরে। ফজলুর রহমানের জীবদ্দশা কেটেছে অসচ্ছলভাবে। তার ভাগ্যে জোটেনি একটি ভালো ঘর। নারিকেল গাছের পাতার ছাউনি আর বাঁশ-খুঁটির ঘরেই হয়েছে তার মৃত্যু। বর্তমানে ঘরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। প্লাস্টিকটাও প্রায় ছিঁড়ে গেছে। ভেতরে ভাঙা কাঠের ওপর পড়ে আছে দীর্ঘদিনের পুরোনো পোশাক। যাকে একটি ঘর বলাও মুশকিল। কিন্তু এটিই প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের ঘর।

মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের এলাকাবাসী লোকমান হাকিম ও আবু সাইদ জানান, ফজলুর রহমান রেখে গেছেন এক ছেলে ও তিন মেয়ে। অসচ্ছলতার কারণে তার ছেলেও ঘরটি মেরামত করতে পারেননি। জীবিকার তাগিদে ছেলে শফিকুল ইসলাম তার মাকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকছেন। সেখানে প্রাইভেট টিউশনি করে জীবন চালাচ্ছেন। অথচ সরকার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। তবে সেই ঘর পাওয়ার তালিকায় নাম উঠলেও ঘর পাননি ফজলুর রহমানের পরিবার।

উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সব থেকে অবহেলিত ও গরিব পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম ফজলুর রহমানের পরিবারটি। তবুও কেনো সরকারের কর্মকর্তাদের নজরে আসছে না বিষয়টি বা কেনই বা পাচ্ছেন না একটি সরকারি ঘর এমন প্রশ্ন নাজিরপুরের মাটিভাঙ্গা ইউপির মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় গ্রামবাসীদের।

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের ছোট মেয়ে সেলিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর বিতরণ তালিকা প্রণয়নে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও আমার বাবার নামটি তালিকায় স্থান পেয়েও কী কারণে বাদ পড়েছে, তা জানি না।’ এ ব্যাপারে জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সমীর কুমার দাস (বাচ্চু) ও ডিসি আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন একই সুরে বলছেন, নাজিরপুর উপজেলায় ৪৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। একসঙ্গে সবাইকে ঘর দেওয়া সম্ভব নয়, মাত্র ছয়ভাগ মুক্তিযোদ্ধাকে ঘর দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পরবর্তী ঘর বরাদ্দ এলেই তাকে (ফজলুর রহমানকে) প্রথমেই দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মুজিববর্ষের একটি আধাপাকা ঘর পাওয়ার জন্য হলেও প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি শ ম রেজাউল করিমের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের ছোট মেয়ে সেলিনা।

 

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network