আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২২
বরগুনা প্রতিনিধি:: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দেলোয়ার হোসেন নামের এক কৃষকের ১০ হাজার তরমুজ গাছ উপড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধ রক্ষা প্রকল্পের প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম গাছগুলো উপড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এতে সর্বস্বান্ত হয়ে পরেছেন ওই কৃষক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বন বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়ে কয়েক বছর যাবৎ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালে বিভিন্ন সবজি চাষ করে আসছেন দেলোয়ার। দুই মাস আগে ওই স্থানে তরমুজের চাষ শুরু করেন তিনি। তরমুজের চারা রোপণের পর থেকে ওই কর্মকর্তারা প্রতিদিন এখানে আসতেন এবং গাছগুলো দেখতেন। কিন্তু রবিবার হঠাৎ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মনিরুল ইসলাম এসে তাঁর প্রায় ১০ হাজার গাছ উপড়ে ফেলেন। এতে তাঁর প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
কৃষক দেলোয়ার বলেন, ‘দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের মোশাররফ অফিসারকে ১০ হাজার টাকাও দিয়েছি। কিন্তু আজকে হঠাৎ মনিরুল ইসলাম স্যার এসে আমার প্রায় ১০ হাজার গাছ উপড়ে ফেলেছেন। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি, তাঁর হাত-পা ধরেছি; কিন্তু শোনেননি। আমাকে এক মাস সময় দিলে আমার এই সর্বনাশটা হতো না। বর্তমানে আমাকে মামলার হুমকি দিচ্ছেন।’
দেলোয়ারের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর সঙ্গে আমি এই জায়গায় কাজ করছি, বীজ রোপণ করেছি। টাকা নেই তাই আমি তিনটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি, এখন এই টাকা কী দিয়ে দিব? আমি এই ক্ষতিপূরণ চাই, না হয় আমার মরণ ছাড়া উপায় নেই।’
প্রতিবেশী নাসির মৃর্ধা বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসী সবাই অনুরোধ করেছি, অন্তত একটি মাস সময় দেওয়া হোক। তারপর আপনাদের যদি কোনো ক্ষতি হয় ওই ছেলেটা আপনাদের ক্ষতিপূরণ দিবে। কিন্তু তাঁরা কারো কথা শোনেননি। সব গাছগুলোতে ফল আসছে, সব উঠাইয়া ফালাইছে।’
টাকা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বন বিভাগের দায়িত্বে থাকা গঙ্গামতি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ বলেন, ‘আমি কোনো টাকা-পয়সা নিইনি, এগুলো সব মিথ্যা। তারে নিষেধ করার পরও সে গাছ লাগাইছে। ওখানে ঘাস নষ্ট হওয়ার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী গাছ উঠাইছে, আমি উঠাইনি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধ রক্ষা প্রকল্পের প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ওখানে তরমুজগাছ লাগিয়েছে আমি আগে দেখিনি। আজকে দেখলাম, আর আমাদের বেড়িবাঁধ রক্ষায় লাগানো ঘাস কেটে উঠিয়ে ফেলার কারণে কিছু জায়গা রেখে বাকি তরমুজগাছ আমি উঠিয়ে ফেলেছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, ‘ওই স্থানে এখন প্রকল্প আওতাধীন কাজ হচ্ছে। আমরা নিজেরা আর কিছুদিন পর কাজ শুরু করব। তবে এ ব্যাপারে আমি এখনো শুনিনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমি মাত্রই শুনলাম। লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডে তত্ত্বাবধায়ক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘ওই বেড়িবাঁধের কাজ চায়না প্রজেক্ট আওতায় চলমান আছে। তবুও আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’