১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

গাফফার আলী আকাশ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে উথলী রেলস্টেশনে মানববন্ধন

আপডেট: জুন ১, ২০২৫

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

ছবি: আপডেট নিউজ বিডি টোয়েন্টিফোর

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের গাফফার আলী ওরফে আকাশকে (২৯) চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১লা জুন ২০২৫) সকালে উথলী ইউনিয়নবাসী ও শোকার্ত পরিবারের আয়োজনে উথলী রেলস্টেশনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ৭১৫ আপ কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেশ কিছুক্ষণ উথলী রেলস্টেশনে আটকে রাখা হয়। পরে ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এলাকার শত শত নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। গাফফার আলী ওরফে আকাশ সেনেরহুদা গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে। তিনি চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।

মানববন্ধন বক্তব্য রাখেন জীবননগর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও উথলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা তালিমুল কুরআন বিভাগের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান এবং নিহতের পিতা-মাতা ও স্ত্রীসহ অন্যরা।

এসময় বক্তারা বলেন, ‘গত ২১শে মে ডাউন কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের টিটিই লালন, জিআরপি ও ট্রেনের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী পরস্পর যোগসাজশে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে গাফফার আলী আকাশকে হত্যা করেছে। এ ধরনের হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা অনতিবিলম্বে এ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি। অন্যথায় আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।’

উল্লেখ্য, গত ২১শে মে বিকালে অফিস শেষে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে খুলনাগামী ডাউন ৭১৬ কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের ঙ কোচে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী সেনেরহুদা গ্রামের গাফফার আলী ওরফে আকাশ। দর্শনা হল্ট স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে সড়ক পথে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু জয়রামপুর রেলস্টেশনেের অদূরে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। রেললাইনের পাশে রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তার পকেটে থাকা ছবি ও এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। প্রথমে সবাই ধারণা করেছিল আকাশ হয়তো ট্রেন থেকে অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাকে কেউ ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করবে এমন চিন্তা নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী ধারণায় করেনি৷ কারণ, আকাশ ওই ধরনের ছেলে না৷ অত্যন্ত, নম্র, ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিলেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে কারো কোনো অভিযোগ না থাকায় ওই রাতেই তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে রেলওয়ে পুলিশ। পরের দিন সকালে জানাজা শেষে তাকে সেনেরহুদা জান্নাতুল খাদরা কবরস্থানে দাফন করা হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক ঘটনা। ট্রেনে থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রীর মারফতে জানা যায়, অসাবধানতাবশত নয়, তাকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। একথা শোনার পর নিহতের পিতা জিন্নাত আলী বাদী হয়ে গত ২৬শে মে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা আমলী আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায়, ওইদিন ডাউন কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে দায়িত্বরত জুনিয়র টিটিই লালন চক্রবর্তী (৪২), জিআরপি’র এসআই পারভেজ (৩৬), কনস্টেবল কাদের (৪০) এবং অ্যাটেন্টডেন্ট মিলন (৩৭) ও সোহাগ মিয়াসহ আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। ট্রেনে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন এবং টাকা না দিতে চাইলে তাদের সাথে খারাপ আচরণের প্রতিবাদ করার কারণে সৃষ্ট বাগবিতণ্ডার জেরে নাম উল্লিখিত আসামিসহ আরও ৪-৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মিলে আকাশকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন বাদী জিন্নাত আলী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

আমিনুর রহমান নয়ন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network