৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

শিরোনাম
জীবননগর থেকে অপহৃত ৫ ব্যক্তি ঝিকরগাছা থেকে উদ্ধার বাকেরগঞ্জের কলসকাঠীতে ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে সরকারি মাটিকাটার মহোৎসব গৌরনদী টুয়েন্টিফোর ডটকম-এর ১৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে র‍্যালি, কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বরিশালে জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত! বিএনপি’র প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন জামায়াত প্রার্থী বাকেরগঞ্জে আবুল হোসেন খানকে মনোনয়ন দেয়ায় তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা! সংবাদ প্রতিদিনের বার্তা সম্পাদক হলেন তরুণ সাংবাদিক খান মেহেদী! বাকেরগঞ্জে আবুল হোসেন খানকে মনোনয়ন দেয়ায় তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা বন্ধুর সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেল তরুণীর, বন্ধু গ্রেপ্তার

রাতে গুলির শব্দ, ভীত এলাকাবাসী গৌরনদীতে কি আবার সর্বহারার পদচারনা গোপন বৈঠক 

আপডেট: জুন ২৮, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। বৈশ্বিক মহামারি করোনায় সারা বিশ্ব ধমকে গেছে। অধিকাংশ মানুষ করোনা ভয়ে-আতঙ্কে ঘরমুখি। দেশ ব্যাপি চলছে এক ধরনের সুনসান নিরবতা। পুলিশ প্রশাসন সাধারন মানুষকে সেবা দানের পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যস্থ রয়েছে। এই সুযোগে বরিশালের সর্বহারা অধ্যুষিত অঞ্চলে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সদস্যরা গোপন বৈঠক করে সু-সংগঠিত হচ্ছে কি? ।

অতি সম্প্রতি সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সাবেক আঞ্চলিক নেতারা চারটি স্পর্টে জড়ো হয়ে গোপন বৈঠক করেছে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ইদানিং প্রায়ই রাতেই গুলির শব্দ শুনতে পান এলাকাবাসী। বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়ার জন্য উর্ধতন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি। তবে পুলিশ বলেছে, সর্বহারা বলতে কিছু নেই, কতিপয় খারাপ মানুষ আগেও সর্বহারার নামে চুরি ডাকাতি করত । হয়তো ওই গ্রুপগুলো চুরি ডাকাতির জন্য সংগঠিত হতে পারে। খোজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরিকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সান্টু জানান, গৌরনদীর এক সময়ের সর্বহারা অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে সন্ত্রাসীদের পদচারনায় মুখরিত। রাতে কে বা কারা ফাকা গুলি করে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ শাহজিরা গ্রামে একাধিক গুলির শব্দ শোনা যায়। গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহজিরা ও আশপাশ এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায়। রাতে গুলির শব্দ সাধারন মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।  স্থানীয় লোকজন, জানান, এক সময়ে বরিশালের সর্বহারা খ্যাত বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, উজিরপুর, উপজেলার  মানুষ ছিল সর্বহারার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ভীত সন্ত্রস্থ। সর্বহারা সন্ত্রাসী নেতাদের কর্মকান্ডের কাছে জিম্মি ছিল সাধারন মানুষ । ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহনের পরে র‍্যাবের সর্বহারা বিরোধী অভিযানে এ অঞ্চলের সর্বহারা কামরুল গ্রুপ ও জিয়া গ্রুপের প্রভাবশালী আঞ্চলিতা নেতারা ক্রস ফায়ারে নিহত হন। এ সময় জীবন রক্ষায় সর্বহারা নেতারা আত্মগোপনে চলে যায়। ২০০৮ সালে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পরে সর্বহারা নিধন নীতিতে জেলা প্রশাসন ও আওয়ামীলীগ সরকার কঠোর অবস্থান নেন। ফলে পরবর্তি সময়ে এ অঞ্চলের সর্বহারা নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সকলেই জীবন রক্ষায় আন্ডার গ্রাউন্ডে জীবন যাপন করেন। সর্বহারা মুক্ত হয় গৌরনদী, বাবুগঞ্জ, ও উজিরপুর । বরিশালের সর্বহারা অধ্যুষিত সন্ত্রাসী রক্তাক্ত জনপথ শান্তির জনপদে পরিনত হয়। আওয়ামীলীগের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহনের পরে সর্বহারা একাধিক শীর্ষ সর্বহারা নেতা ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আসেন।  সর্বহারা নেতারা কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ইউপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

গৌরনদীর সাকোকাঠি, আধুনা, মহীষা গ্রামের এলাকাবাসী জানান, গত কয়েক দিন ধরে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সাবেক আঞ্চলিক নেতাদের পদচারনায় গোটা এলাকার মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সর্বহারা কামরুল গ্রুপ  সু-সংগঠিত হওয়ার জন্য ৬ জুন থেকে ১৩ জুন চারটি স্থানে গোপন বৈঠক করেছে। গত ৬ জুন প্রথম বৈঠকে বসে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের  সাবেক নেতা, সাবেক এক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতার মল্লিকস্থ গ্রামের বাড়িতে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আঞ্চলিক নেতা সুভাষ চন্দ্র, এক সময়ে দুধর্ষ সর্বহারা নেতা শাহজিরার হুমায়ুন কবির, ইমাম হোসেন ও আজিজুল মোল্লাসহ প্রায় ২০/২৫ জন সর্বহারা নেতা কর্মী। গত ৯ জুন সকালে বৈঠক বসে সরিকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সর্বহারা কামরুল গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা সুভাষের আধুনাস্থ গ্রামের বাড়িতে । ওই দিন সন্ধ্যায় তৃতীয় বৈঠক বসে সাকোকাঠ শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের পেছনে। গত ১৩ জুন সন্ধ্যায় বৈঠক করে সর্বহারা নেতা আজিজুল মোল্লার মহিষাস্থ গ্রামের বাড়িতে।

সরিকল ইউনিয়নের একাধিক  জনপ্রতিনিধি জানান, সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সাবেক নেতাদের আনাগোনা ও পদচারনায় এলাকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে কি শান্তির জনপদে অশান্তির পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বলেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অত্যাআসন্ন। তাই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের নেতারা পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। সর্বহারা কামরুল গ্রুপের নেতারা  সু-সংগঠিত হতে দেশের মহামারি দূর্যোগের নিরবতা ও প্রশাসনের ব্যবস্থতার সময়কে কাজে লাগিয়েছে।  একের পর এক গোপন বৈঠক করে সংগঠিত হচ্ছে। এলাকায় সর্বহারা কামরুলের তৎপরতায় উদ্বিগ্ন সাধারন মানুষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সাবেক নেতাদের অতীতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ভয়াবহ চিত্র মনে পরলে মানুষ আতকে উঠে। গত ৩০ বছর যাবত বরিশাল পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভূক্ত রয়েছে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা ও সরিকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুভাষ হালদার। ১/১১ সরকার ও বিএনপি সরকারের সময়ে ১০ বছর যাবত আত্মগোপনে ছদ্দবেশী জীবন যাপন করে সুভাষ। আওয়ামীলীগ সমর্থক হওয়ায় মহাজোট সরকার গঠনের পর প্রকাশ্যে না আসলেও সুভাষ হালদার মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে অবস্থান নিতেন। গোপনে তার অনুশারীদের নিয়ে বৈঠক করে কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পরবর্তিতে ২০১৭ সালে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে পুনরায় আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে সুভাষ শারীরিকভাবে অনেকা দূর্বল হলেও তার নেতৃত্বেই সাবেক সর্বহারাদের সংগঠিত করার উদ্যোগ চলছে। গোপন বৈঠকে থাকা একাধিক সূত্র জানায়, সর্বহারা কামরুল গ্রুপের নেতৃত্ব তরুন ও যুবকদের হাতে দিতে উপস্থিত সকলেই এক মত পোষন করেন। তবে বর্তমান সময়ে সাবেক আঞ্চলিত নেতারা পৃষ্টপোষকতা থাকবেন। ফ্রন্ট লাইনের নেতৃত্বে থাকবেন গৌরনদীর মহিষা গ্রামের মৃত গফুর মোল্লার ছেলে আজিজুল মোল্লা, শাহজিরার হুমায়ুন কবির ও আধুনার ইমাম হোসেনসহ তরুনরা। বিগত দিনে আজিজুল মোল্লা সর্বহারা কামরুল গ্রুপের সেকন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ভিরস্তি তুলে ধরে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর বর্তমান স্বরাস্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অভিযোগ করেন এলাকাবাসি। স্বরাস্ট্র মন্ত্রী ১৩ অক্টোবর (২০১৫) বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তৎকালীন বরিশাল পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। ওই সময় প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার সুপারিশে  বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। এদিকে উজিরপুর ও বাবুগঞ্জের স্থানীয়রা জানান, সর্বহারা কামরুল গ্রুপের তৎপরতায় সর্বহারা জিয়া গ্রুপের সাবেক নেতাদের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জিয়া গ্রুপের নেতারা কামরুল গ্রুপের নেতাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করছে এবং তারাও (জিয়া গ্রুপ)  জিয়া গ্রুপের  সাবেক নেতাদের মধ্যে এক ধরনের যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। সর্বহারা কামরুল ও জিয়া গ্রুপের তৎপরতা ও সু-সংগঠিত হওয়ার আগেই প্রশাসনের নজরদারি দেয়ার জন্য অভিমত ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুধীজন নেতৃবৃন্দ।  সর্বহারা কামরুল গ্রুপের নেতাদের দফায় দফায় বৈঠক করা ও জিয়া গ্রুপের নজরদারির বিষয়টি খতিয়ে দেখে আগে ভাগে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরিকল ও বাবুগঞ্জের একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধি বরিশালের পুলিশ সুপার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন।

সর্বহারা কামরুল গ্রুপকে সু-সংগঠিত করার অভিযোগ ও বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, দেশে সর্বহারা রাজনীতি করার পরিবেশ ও সুযোগ কোনটাই নেই। তাছাড়া সর্বহারা বলতে কিছুই নেই। মূলত আগরপুর ইউনিয়নের সাবেক প্রায়াত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী পালনে প্রস্তুতি সভায় বসা হয়। গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন,  সর্বহারা বলতে কিছু নেই, কতিপয় খারাপ মানুষ আগেও সর্বহারার নামে চুরি ডাকাতি করত । হয়তো ওই গ্রুপগুলো চুরি ডাকাতির জন্য সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। খোজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

 

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network