৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

তিন ফসলি জমি রক্ষার জন্য গ্রামবাসীর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

আপডেট: জুলাই ৪, ২০২৪

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

ছবি: আপডেট নিউজ বিডি টোয়েন্টিফোর

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠে তিন ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করতে চায় সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড।’ তবে দীর্ঘদিনই ধরেই ওই গ্রামের কৃষকরা প্রকল্পটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে অনড় সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড।

বৃহস্পতিবার (৪ঠা জুলাই ২০২৪) বেলা ১২টার দিকে প্রকল্প স্থাপনের প্রস্তাবিত এলাকা সরেজমিনে তদন্তে আসেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মৎ মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। কমিটির অন্যরা হলেন- বিদ্যুৎ বিভাগের (নরায়নযোগ্য জ্বালানি-১) উপসিচব আলী আফরোজ, চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা এবং চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মিজানুর রহমান। এসময় প্রতিনিধি দলের সামনে কাফনের কাপড় পরিধান করে এবং হাতে বিষের বোতল নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষকরা। কৃষকদের বিক্ষোভে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। পরে পুলিশি পাহারায় তদন্ত দল ওই গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ, জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবিদ হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। স্থানীয়রা বলেন, ‘জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠের জমি খাদ্য উৎপাদনে কৃষি সমৃদ্ধ। এ জমিতে সব ধরনের ফসল ফলানো হয়। কিন্তু কয়েক বছর আগে ওই গ্রামের ১৮০ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড’। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল জমি বিক্রির জন্য মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে, তা সবই তিন ফসলি। সেখানে প্রকল্প স্থাপন করলে কৃষির ওপর নির্ভরশীল গ্রামের ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। পুরো গ্রামে জমির পরিমাণ ৬০০ একর। যার মধ্যে ৬০ শতাংশই কৃষিজমি। এ ছাড়া ২০ শতাংশ বসতভিটা ও বাকি ২০ শতাংশ বাগান ও অন্যান্য স্থাপনা। মাঠের জমিতে ধান, ডাল, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেয়ারা, তিল এবং বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করা হয়।’

তদন্ত শেষে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের শান্ত করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম বলেন, ‘এই ধরনের জমিতে কী ধরনের ফসল হয়, এলাকাবাসী কী চায়, আমাদেরকে এটা তদন্ত করার জন্য পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আমরা জমি দেখলাম, এখানকার কৃষি অফিসারের কাছে তথ্য নিয়েছি, আপনাদের কথাও আমরা শুনলাম। সব বিষয় বিবেচনা করে আমরা একটি প্রতিবেদন দেব।’ এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, কৃষ্ণপুর গ্রামে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হলে ওই এলাকার তিন ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে যাবে। নানাবিধ সমস্যায় পড়বেন কৃষকরা। এজন্য কৃষকদের দাবি, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি অন্য কোনো এলাকার অনাবাদি জমিতে করা হোক। তাহলে কারো কোনো আপত্তি থাকবে না। করতে হবে না মানববন্ধন ও বিক্ষোভ।

আমিনুর রহমান নয়ন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার। 

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network