আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
এইচ এম জাকির, ভোলা ॥ মধ্য রাত থেকে শুরু হচ্ছে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে টানা দুই মাসের অভিযান। জাটকা সংরক্ষণ ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর অভয়াশ্রম গুলোতে সকল ধরনের জালফেলা ও মাছ ধরার উপর সম্পুর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা দু-মাস মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ১শ’ ৯০ কিলোমিটার অর্থাৎ ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এবং ভোলার ইলিশা থেকে মনপুরার চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকা অভায়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে।
এই সময়ে নদীতে থাকা ইলিশের পোনা ও জাটকা ইলিশ বড় হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়তে চলে আসে নদীর অভায়াশ্রমে। সংগত কারনেই এ সময়ে নদীতে মাছ ধরার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এমনকি নিষেধাজ্ঞা অমান্য কারীর বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে দুই মাস থেকে সর্বচ্চ দুই বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি ব্যবস্থা রয়েছে। তাই অভিযানকে সফল করতে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও পুলিশ প্রশাসন এক যোগে মাঠে কাজ করছে।
এদিকে নদীতে টানা দুই মাসের অভিযান শুরু হলেও বিগত বছর গুলোর মতো এবার অভিযানের শুরুতে জেলেদের জন্য করা হয়নি কোন ধরনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। যদিও সপ্তাহ খানেক জেলা প্রশাসের পক্ষ থেকে জেলার সাত উপজেলাই জেলেদের পুনর্বাসনের চাল পৌছে দেয়া হলেও দুই একটি ইউনিয়ন ছাড়া অধিকাংশ ইউনিয়নের জেলেদের মাঝেই এখনো বিতরণ করা হয়নি এ চাল। তাতে করে পূর্বের ন্যায় এবারের অভিযানেও জেলেদের যেন চিন্তার শেষ নেই।
তবে অন্যান্য বারের অভিযানের চেয়ে এবারের অভিযানে সাধারণ জেলেদের মাঝে একটি বিরূপ প্রভাব দেখা দিবে। অভিযোগ, প্রতি বছরই অভিযান শুরু হওয়ার আগে জেলেদের জন্য কোন ধরনের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয় না। অভিযানের মাঝামাঝি কিংবা শেষের দিকে যে পরিমান চাল দেয়া হয় তাও অভিযানের শেষের দিকে। অভিযান দেয়ার আগেই যদি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে শুধু দুই মাস কেন এর চেয়ে বেশি সময় ধরে অভিযান থাকলেও কোন জেলেকেই না খেয়ে থাকতে হয় না। এমনকি জীবনের ঝুকি নিয়ে কোন জেলেকেই নদীতে নামতে হতো না।
সরেজমিনের গিয়ে দেখা যায়, অভিযানকে সফল করতে মেঘনা ও তেতুলিয়ার নদীর অধিকাংশ জেলেরাই তাদের জাল সাবার গুছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পর করছেন। আবার কোন জেলেকে নদীতে দেখা গেলেও রাত ১২টা বাজার আগেই তারাও নদী থেকে তাদের জাল নৌকা নিয়ে সরিয়ে রাখবে নিরাপদে। তবে নিষেধাজ্ঞার শুরু হওয়ার প্রথম থেকেই জেলেদের পুনর্বাসনের জন্য যে কোন ধরনের ব্যবস্থার করতে সরকারের প্রতি তারা জোর দাবী জানান।
সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার বাসিন্দা মাইনুদ্দিন মাঝি বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই। একদিন নদীতে না গেলে আমাদের হয়তো পেটে ভাত জোটাতেই কষ্ট হয়ে যায়। তার মধ্যে আবার দুই মাসের অভিযানে আমাদের মতো গরীব জেলেদের জন্য সরকার কোন ব্যবস্থা না করে আমাদেরকে অনেক ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে। আবুল হাসেম মাঝি বলেন, অভিযান শুরু হলে কোন জেলেকে সরকারের পক্ষ থেকে চাল বা কোন উপটকন দেয়া হয়নি। প্রতিবছরই অভিযান শেষ হওয়ার দুই থেকে আড়াই মাস পরে জেলেদের পুনরবাসনের চাল দেয়া হয়। তা না করে অভিযানের পূর্বে এ চাল দিলে জেলেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সুখ শান্তিতে চলতে পারতো। ইলিশা এলাকার লোকমান মাঝি বলেন, আমরা যারা জেলে পেশায় আমি তারা অন্য কোন পেশায় গিয়ে কাজ করতে পারি না। তাই এ সময় গুলোতে কোন ভাবে ধার দেনা করে আমাদেরকে চলছে হয়। যদি ঠিক ভাবে আমাদেরকে চাল ডাল দেয়া হতো তাহলে আর কোন সমস্যা হতো না।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার এ সময়টিতে দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলেকে তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করা কথা বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ দুই মাস যদি জেলেরা একটু কষ্ট করে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে, আগামী দিন গুলোতে এ সকল জেলেদের জালেই ধরা পরবে ঝাকে ঝাকে বড় ইলিশ। কেননা আজকের এক একটি ইলিশের পোনা দুই মাস যেতেই বড় আকৃতিতে পরিনত হবে। তখন এ সকল জেলেরাই সে মাছ আহরন করে তারাই লাভবান হবে।
তবে জেলেদের কথাই বিবেচনা করে বিভিন্ন সময় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে জেলেদেরকে গরু, ছাগল, সেলাই মেশিন, নৌকা জাল সহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী দেয়া হয়ে থাকে। এরপরও অভিযানের দীর্ঘ এই সময়ে জেলেদের পুনর্বাসের কথা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চার মাসে ১৬০ কেজি চাল দেয়া হবে বলে জানান ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ আরিফুজ্জামান। এর সাথে সমাজের বৃত্তবান, রাজনীতিবীদ ও বিভিন্ন সমাজসেবকরা যদি জেলেদের পাশে কিছুটা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, তাহলেও নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে সাধারণ জেলেরা কিছুটা হলেও ভালো ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে বলেও মনে করছেন তিনি।
উল্লেখ্য জেলার সাত উপজেলায় নিবন্ধনকৃত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার হলেও এর বাহিরে রয়েছে আরো দেড় লক্ষাধিক জেলে।