৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

মানবপাচারকারী বিপ্লবের শাস্তির দাবিতে জীবননগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

আপডেট: এপ্রিল ২৪, ২০২৪

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

ছবি: আপডেট নিউজ বিডি টোয়েন্টিফোর 

মানবপাচারকারী বিপ্লব হোসেন ওয়াজের শাস্তির দাবিতে জীবননগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৪শে এপ্রিল ২০২৪) সকাল সাড়ে ১০টার সময় উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের ভুক্তভোগী ইব্রাহিমের পরিবার এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

লিখিত বক্তব্যে ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী হাবিবা খাতুন শিল্পী বলেন, ‘আমার স্বামী চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের খাজা মইনুদ্দিনের পুত্র ইব্রাহিম একজন সৌদি প্রবাসী। পারিবারিক জীবনে আমাদের ছোট দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আমার স্বামী সৌদি আরব যাওয়ার পূর্বে জীবননগর উপজেলায় ওষুধ কোম্পানির চাকরি করতো। পরবর্তীতে বিদেশে মানবপাচারকারী ও দালাল একই গ্রামের মৃত চাঁন মিয়া ওরফে বুড়োর পুত্র বিপ্লব হোসেন ওয়াজের সাথে আমার স্বামী ইব্রাহিমকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়। মানবপাচারকারী বিপ্লব হোসেন ওয়াজ আমার স্বামীকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, সেখানে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে মোটরসাইকেলে করে। সেই সাথে আমার স্বামী ইব্রাহিম সৌদি আরবে গেলে সে উচ্চ বেতন পাবে। এমনকি প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে প্রতিমাসে সৌদি ২ হাজার ৮০০ রিয়াল দেবে যা, বাংলাদেশী টাকায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বেতন হবে বলে আশ্বাস দেয়। এছাড়াও আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেনকে সৌদি আরবে ড্রাইভিং লাইসেন্স, এক বছরের আকামা, থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রিসহ ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় মৌখিক চুক্তি করে।

পরবর্তীতে আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেন পরিবারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। দুটি কন্যা সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমিসহ পরিবারবর্গ তার কথায় রাজি হয়। এরপর মানবপাচারকারী বিপ্লব হোসেন ওয়াজ ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০২৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেনকে সৌদি আরবে পাঠায়। এদিকে সৌদি আরবে যাওয়ার পর যে কোম্পানির কাছে তাকে পাঠানো হয়েছিল সেখানে তারা কোনো কাজ ছাড়া ১৫ দিন আটক অবস্থায় রাখে। এমনকি সেখানে তারা তিন বেলা খেতে পর্যন্ত দিতো না। এরপর ওই কোম্পানি আমার স্বামী ইব্রাহিমকে আরেক কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করে।

সেখানেও কোন কাজ না দিয়ে আটক করে রাখা হতো। এরপর আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেন বিষয়টি আমাকে খুলে বললে আমি জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে জীবননগর থানার এএসআই রহিমের অনুকূলে আমাদের দুই পক্ষ জীবননগর থানায় হাজির হওয়ার পরে সেখানে মানবপাচারকারী বিপ্লব হোসেন ওয়াজ সকল দায় স্বীকার করে প্রতিশ্রুতি দেয় যে দুই মাসের মধ্য আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেনকে কাজ দিবে। আর এই দুই মাসে জরিমানাস্বরূপ সে আমাদেরকে ৩৮ হাজার টাকা দিবে। এরপরও যদি সে তার কথা মতো কাজ না দিতে পারে তাহলে আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ চার লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিবে বলে স্ট্যাম্পে জীবননগর থানার এএসআই রহিমের উপস্থিতিতে চুক্তিবদ্ধ করে। কিন্তু সে, থানার নির্দেশকে অমান্য করে আমাদেরকে শুধুমাত্র দশ হাজার টাকা এবং আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেনকে নয় হাজার টাকা প্রদান করে। এরপর মানবপাচারকারী বিপ্লব হোসেন ওয়াজ আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেনকে একটি কাজ দেয়। যেখানে ১৮ ঘণ্টা কাজ করিয়ে নিয়ে সপ্তাহে ৫০ থেকে ১০০ রিয়েল দিতো যা বাংলাদেশী টাকায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা।

এরপর আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেন আমাদের কাছে পুনরায় অভিযোগ করে মানবপাচারকারী বিপ্লব হোসেন ওয়াজ আমাকে ১০ ঘন্টা কাজের বিনিময়ে ২৮০০ রিয়াল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আমি এখানে ১৮ ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ রিয়াল পাচ্ছি যা বাংলাদেশী টাকায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। মানবপাচারকারী বিপ্লব হোসেন ওয়াজ আমার স্বামীর কাজ করা অবস্থায় তার দালাল চক্র দিয়ে কাজের বিভিন্ন ছবি তোলে এবং লোকসমাজে দেখাতে থাকে আমি তাকে চাকরি দিয়েছি। কিন্তু কাজের বিনিময়ে যেখানে সপ্তাহে ৭০০ রিয়াল পাওয়ার কথা সেখানে তাকে দেয়া হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ রিয়াল। এছাড়াও আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেন আমাদেরকে জানায়, সেখানে তার পাসপোর্টে এক্সিট মারা হয়েছে। এছাড়াও তাঁর দুই বছরের আকামা করার কথা থাকলেও তার কোন আকামা করা হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে সে এখন অবৈধ হিসাবে গণ্য হয়েছে।

এরপর আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেন ওই কোম্পানির মালিকের কাছে বাংলাদেশে ফেরত যাবার কথা বলে পাসপোর্ট চাইতে গেলে সেই কোম্পানির মালিক আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেনকে বলেন, আমি তোমাকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছি। যদি ৫ লক্ষ টাকা দিতে পারো তাহলে আমরা তোমাকে পাসপোর্ট দিবো। তখন তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবা।

পরবর্তীতে আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেন তাদের কাছে আকুতি মিনতি জানালে তারা তাকে সাহায্য না করে বরং তাকে একটি কথিত মিথ্যা মামলা দিয়ে সৌদি আরবে একটি বাসা বাড়িতে কোন প্রকার খাবার ছাড়া আটক করে রাখে। সেখানকার কোম্পানির মালিকের ভাষ্য, তোমাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছি। যেহেতু আমি কিনেছি, সেহেতু পাঁচ লক্ষ টাকা দিলে আমি তোমার পাসপোর্ট ফেরত দেবো। আর তা না হলে তোমাকে এখানে সারা জীবন কাটাতে হবে।

একথা শুনে আমরা পরিবারের লোকজন মানবপাচারকারী বিপ্লব হোসেন ওয়াজের কাছে যায়। সেখানে আমার স্বামীর দুর্দশার কথা বলি। কিন্তু সে উল্টো আমাদের উপরে দোষ চাপিয়ে দেয়। সে বলে আমার বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বিদেশে নিয়ে গিয়েছি। আমার দায়িত্ব শেষ। এমনকি বিদেশে আমার স্বামী ইব্রাহিম হোসেন নাকি মারামারি করার কারণে মামলা হয়েছে এবং আটক আছে। এরকম মিথ্যা অপবাদ দেয়। এছাড়াও সে বিভিন্ন মহলে মানবপাচার ও দালালি ঢাকতে আমার স্বামীর সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে সৌদি আরবে মানবপাচারকারী বিপ্লব হোসেন ওয়াজ আমার স্বামীর মতো আরও ১৮ জনকে এভাবে পাঠিয়েছে। তারাও কোন কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এসময় তিনি, মানবপাচারকারী ও দালাল বিপ্লব হোসেন ওয়াজের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ করেন। আর যাতে জীবননগর থানার কোন যুবক তার হাত দিয়ে প্রতারিত না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং স্বামী ইব্রাহিমকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য বিপ্লব হোসেন ওয়াজের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ইব্রাহিমকে বিদেশে পাঠানোর বেশ কিছুদিন পর তাকে কাজ না দেওয়ার অভিযোগে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে আমার বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে দুই মাসের মধ্যে তাকে কাজ দেওয়ার জন্য থানায় বসে একটি স্ট্যাম্প করা হয়। কাজ না দিলে তাকে দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দিতে বলা হয়। সে বিদেশে কাজ শুরু দেশে টাকা পাঠাতেও শুরু করে। এর মধ্যে তাকে এক্সিট মারা হয়। আমি কোম্পানিতে কথা বললে তাঁরা আমাকে জানায়, যদি কোম্পানি তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয় তবে সে টাকা ফেরত পাবে। এরইমধ্যে তারা ৪জন কোম্পানির বসের সাথে মারামারি করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সৌদিতে মামলা হয় এবং তাদেরকে ১৫ হাজার রিয়াল করে জরিমানা করা হয়। এই নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঝামেলা করে বেড়াচ্ছে। তারা সৌদিতে মারামারি করলে তো আর দায়ভার আমি নিতে পারবো না। তিনি আরও বলেন, তারা সেখানে ফুড ডেলিভারির কাজ করে। যেটা টার্গেটের কাজ। ৫০০ ডেলিভারি দিলে ২ হাজার ৫০০ রিয়াল পাবে। এখন তারা যদি টার্গেট পূরণ করতে না পারে তাহলে তো টাকা কম পাবে এটাই স্বাভাবিক। তার সাথে আরও যারা বিদেশে গিয়েছে তাঁরা কিন্তু ঠিকই সেখানে কাজ করছে।’

জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার কয়েক মাস আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উভয়পক্ষকে থানায় ডেকে এনে বিষয়টি সমাধান করা হয়। সমাধানের পর আবার ঝামেলা শুরু হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ফোন দেওয়া হয়েছে। তিনি চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে আছেন। কয়েকদিন পর তিনি এলাকায় আসলে এবিষয়ে আবার সমাধান করা হবে।’

আমিনুর রহমান নয়ন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার। 

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network