১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

শিরোনাম

৫৭ বছরেও শেবাচিমে চালু হয়নি স্ট্রোকের রোগীদের জন্য নিউরো ওয়ার্ড, নেপথ্যে….

আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২৫

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দক্ষিণবঙ্গের কোটি মানুষের সবচেয়ে বড় চিকিৎসালয়। প্রতিদিন অন্তত তিন সহস্রাধিক রোগী এখানে আউটডোরে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। তাছাড়া প্রায় দুই সহস্রাধিক রোগী ভর্তি থাকেন সবসময়ই। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ায় অনেক জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসাও এখানে পাওয়া যায় হাতের কাছে। অথচ দেশের সর্ববৃহৎ ও পুরাতন ৮ টি মেডিকেল এর একটি হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পরেও এখানে আলাদাভাবে চালু হয়নি স্ট্রোকের রোগীদের জন্য বিশেষায়িত নিউরোমেডিসিন ওয়ার্ড। এর নেপথ্যে একজন নিউরো মিডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইতিপূর্বে একাধিকবার স্ট্রোকের রোগীদের জন্য নিউরো চিকিৎসায় আলাদা ওয়ার্ড চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল হাসপাতাল প্রশাসন। কিন্ত নিউরো মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ও শেবামেক এর সহযোগি অধ্যাপক ডাঃ অমিতাভ সরকারের দ্বীমত ও অসহোযোগীতার কারনে তা চালু করা সম্ভব হয়নি। শেবাচিমের অন্তত দুইজন পরিচালক এই উদ্যোগ নিয়েও বাঁধার মুখে ব্যর্থ হন। হাসপাতালে সমস্ত লজিস্টিক সাপোর্ট ও সক্ষমতা থাকার পরেও এই ওয়ার্ডটি চালু হয়না। স্ট্রোকের রোগী আসলে তাদেরকে মেডিসিন বিভাগে জ্বর/কাশি বা অন্য রোগীদের মধ্যে দেওয়া হয়। ফলে যথাসময়ে সে যথোপযুক্ত চিকিৎসা পায়না।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডাঃ একেএম নজমুল আহসান বলেন, ইতিপূর্বে যে যাই বাঁধা দিয়ে থাকুকনা কেন সেগুলো দেখার বিষয় নয়। আমরা বর্তমান পরিচালক স্যারের উদ্যোগে শিঘ্রই নিউরো মেডিসিন ওয়ার্ড চালু করবো।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেবাচিমে’র নিউরো মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ও শেবামেক এর সহযোগি অধ্যাপক ডাঃ অমিতাভ সরকার এর নিজস্ব মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে নগরীর বাজার রোড কেএমসি হাসপাতাল এবং নগরীর সদর রোডের বেলভিউ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ল্যাব। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি সেখানে চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত থাকেন। ভিজিট, রাউন্ড ফি, শুধুমাত্র ডা: অমিতাভের মালিকানাধীন বেলভিউ ডায়গনস্টিক ল্যাব থেকে সিটিস্ক্যানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় -অপ্রয়োজনীয় গলাকাটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে বাধ্য হওয়া সহ নানা ভাবে নিঃশ্ব হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। তাছাড়া রাতে তিনি চেম্বার করেন সদর রোড বেলভিউ ডায়াগনস্টিকে। সেখানে তিনি এক সাথে ১০/১২ জন রোগী চেম্বারে ঢুকিয়ে রোগী দেখেন। এতে একদিকে যেমন গণচিকিৎসার মত অপচিকিৎসা হয়, তেমনি রোগীর অধিকার গোপনীয়তাও লঙ্ঘিত হচ্ছে। রোগীর হিস্ট্রি লেখা, প্রেসার দেখা সহ যাবতীয় কাজ করছেন তার সহকারী। অনেক সময় ঔষধও লিখে দিচ্ছেন সেই সহকারী। অথচ রোগী ডাঃ অমিতাভকে দেখানোর জন্য ভিজিট দিলেও আদৌ তার কোন চিকিৎসা সে পায়না।
শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও ডাঃ অমিতাভ নিয়মিত ক্লাসে যাননা। শুধুমাত্র বায়োমেট্রিক হাজিরা প্রদান করে তিনি চলে যান প্রাইভেট প্রাকটিসে। সময় শেষে আবার গিয়ে ক্লোজিং পাঞ্চ দিয়ে আসেন। হাসপাতালের ওয়ার্ডে তার শিডিউলে রাউন্ড দেননা । শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষায় মাঝে মধ্যে লোক দেখানো রাউন্ড দেন তিনি। ইতিপূর্বেও দুই তিন বছর আগে চিকিৎসকদের অনিয়মিত হাজিরার অভিযোগে শেবাচিমে দুদকের অভিযানে হাতেনাতে ধরা পড়লেও অন্যান্য আনেক চিকিৎসককে বদলি করা হলেও অদৃশ্য কারনে আওয়ামিলীগের দলীয় প্রভাবে ধরা-ছোয়ার বাহিরে থেকে যান এই প্রভাবশালী চিকিৎসক। বিশেষায়িত বিষয়ে যেমন কিডনী, বাত ব্যাথার সহকারী অধ্যাপকগন সপ্তাহে একদিন বহি:বিভাগে রোগী দেখলেও একমাত্র ব্যতিক্রম নিউরোমেডিসিন এর ডাঃ অমিতাভ সরকার। প্রতিদিন তিনি চেম্বারে শতাধিক রোগী দেখলেও সপ্তাহে একদিন তার কর্মস্থলে বহি:বিভাগে সেবাদানে তিনি নারাজ। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তিনি নিষিদ্ধ আওয়ামী সমর্থক উগ্র চিকিৎসক কর্মচারীদের সাথে নিয়ে শান্তি সমাবেশের নামে ছাত্রবিরোধী সমাবেশ আয়োজন করেন। এই সমাবেশে উপস্থিত সকল চিকিৎসকে শাস্তিমূলক বদলী হলেও ব্যতিক্রম একমাত্র ডাঃ অমিতাভ। তাছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সূত্রমতে, তিনি ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেলভিউ’র বিভিন্ন অংশীদারগণ বর্তমান সরকারকে বেকাদায় ফেলতে বরিশালে বিভিন্ন উস্কানীমূলক আন্দোলনের প্রধান অর্থদাতা হিসাবে নিয়োজিত আছেন এবং কিছু দিনপূর্বে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তার মালিকানাধীন বেলভিউ ডায়গনস্টিক ল্যাবকে সিভিল সার্জন ও জেলা প্রসাশনের যৌথ মোবাইল কোর্টে বিশাল অংকের টাকা জরিমানা করা হয়। সম্প্রতি দেশে আয়কর ফাঁকি দেওয়া শীর্ষ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে “সেরা ডাক্তাররা কর ফাঁকিতেও চ্যাম্পিয়ান” শিরোনামে একটি সাংবাদ প্রচার করে জনপ্রিয় মিডিয়া বাংলানিউজ২৪.কম, এই সংবাদে বলা হয় “দেশে অন্তত দশ হাজার ডাক্তার রয়েছেন, যাঁরা বেশি আয় করেও বছরে অন্তত ছয় হাজার দুই শত পঞ্চাশ কোটি টাকার কর ফাঁকি দেন”। বড় অংকের কর ফাঁকি দেওয়া এই দশ হাজার চিকিৎসকের মধ্যে প্রথম দিকেই আছেন বরিশালের ডা: অমিতাভ সরকার।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শেবামেক এর সহযোগি অধ্যাপক ডাঃ অমিতাভ সরকার বলেন, আমি হাসপাতালের অথরিটি নই। ওয়ার্ড চালু করবে পরিচালক। জনবলসহ সকল কিছু সরবরাহের মাধ্যমে কাল (আগামীকাল) ওয়ার্ড চালু করলে আমি দায়িত্ব পালন করব। আমার বাঁধার কারণে নিউরো ওয়ার্ড চালু হয়না তথ্যটি মিথ্যা।
তিনি আরও বলেন, আমি দুটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের সাথে জড়িত; সঠিক। আমি একা নই, হাসপাতালের সকল চিকিৎসকই প্রাইভেটভাবে রোগীর চিকিৎসা প্রদান করেন। কলেজে ক্লাস না নেওয়ার অভিযোগটিও সঠিক নয় বলে মন্তব্য ডা. অমিতাভের।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ ফায়জুল বাশার বলেন, ডা. অমিতাভবের বিরুদ্ধে ক্লাস না নেওয়ার বিষয়ে অফিসিয়ালিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ এ.কে.এম মশিউল মুনীর বলেন, কারও কোন বাধা থাক বা না থাক সেটা আমরা আমলে নিবনা। খুব শিঘ্রই নিউরো মেডিসিন সহ আটটি আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হবে। অন্তত তিনজন নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বর্তমানে শেবাচিমে কর্মরত আছেন। তাই এই বিভাগ চালু করতে এখন আর কোন সমস্যা নেই।
তবে বরিশালের সচেতন মহল মনে করেন যে, বিগত দুই পরিচালকের ন্যায় বর্তমান শেবাচিমের পরিচালকও এবার শেবাচিমে বিষেশায়িত নিউরো ওয়ার্ড প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হতে পারেন। কারন বরিশালে এই নিউরো চিকিৎসার সাথে জড়িত কোটি কোটি টাকার প্রাইভেট চিকিৎসা ও টেস্ট বাণিজ্যের নেপথ্য নায়করা অনেক শক্তিশালী।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network