আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২৫
বরিশাল সংবাদদাতা:: স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের নামে বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (শেবাচিম) ছাত্র এবং হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলাকারীদের আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা না হলে একযোগে কর্মবিরতি পালনের হুমকি দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। অন্যদিকে, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করেছেন শেবাচিমের শিক্ষার্থীরা।সোমবার মিড লেভেল চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক সংবাদ সম্মেলন এবং মানববন্ধনে এ দাবি জানিয়েছেন।
শেবাচিমের শিক্ষার্থী জুবায়ের আল মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শুরুতে স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু, আন্দোলনের নামে তারা আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ এমনকি, আমাদের মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে। রাস্তায় শিক্ষার্থীরা বের হলে গালিগালাজ ও ধাওয়া করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি। তাই, মহিউদ্দিন রনি ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফি এবং অন্য উস্কানিদাতাদের গ্রেপ্তারসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ দাবিতে আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে আমরা সব শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করেছি। যতদিন পর্যন্ত মহিউদ্দিন রনি ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফি এবং অন্য উস্কানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা ক্লাস বর্জন করব।বেলা ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. মো. নাজমুল হুদা বলেন, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরা গত ১৪ আগস্ট কর্মবিরতিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু, হাসপাতালের পরিচালক স্যারের অনুরোধ ও রোগীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি। এ সময় পরিচালক মহোদয়কে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। কিন্তু, ১৭ আগস্ট আবার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলীপ রায় স্যারের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এছাড়া, হাসপাতালের স্টাফদের ওপর হামলা করে। হাসপাতাল ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুরো হাসপাতালে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। হামলার উস্কানিদাতা এবং হামলাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় আমরা রবিবার বিকেল ৩টা থেকে কর্মবিরতিতে যাই। রোগীদের কথা চিন্তা করে ফের কর্মস্থলে এসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু, হামলাকারীরা আমাদের অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা হামলায় জড়িত ব্যক্তি এবং উস্কানিদাতাদের আগামীকাল ১৯ আগস্ট দুপুর ১২টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায়, আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল দুপুর ১২টা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ সব চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
পৃথক সংবাদ সম্মেলনে মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেছেন, গত ১৭ আগস্ট মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী হাসপাতালের প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের হুমকি দেয়। ওই দিন আমাদের মেডিসিন ইউনিট-২ এর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলীপ রায়কে বেদম মারধর করে। চিকিৎসকের ওপর এমন নির্যাতন ও হাসপাতালের সামনে তারা অবস্থান নেওয়ায় রোগীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তেমনই আমাদের চিকিৎসকরা কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। তাই, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মহিউদ্দিন রনি ও কাফিসহ দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। নির্ধারিত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা সর্বস্তরের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাব। শুধু রোগীদের কথা বিবেচনা করে আগামী ৪৮ ঘণ্টা আমরা হাসপাতালের সব সেবা চালু রাখব। এ সময়ের মধ্যে যদি কোনো চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপরে হামলা হয় অথবা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তাহলে ওই সময় থেকে আমরা পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাব।
বেলা সাড়ে ১২টায় হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের নামে চিকিৎসক ও স্টাফদের ওপর হামলাকারী মহিউদ্দিন রনিসহ দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল মোনায়েম সাদ বলেছেন, স্বাস্থ্য সংস্কারের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু, ওরা স্বাস্থ্য সংস্কারের নামে আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের প্রতিপক্ষ মনে করে প্রতিদিনই হামলা চালাচ্ছে। আমরা সকলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই, আমরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। এ দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় আমরা আবারও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করব। এরপরও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা একযোগে জরুরি সেবাসহ সকল সেবার ক্ষেত্রে কর্মবিরতিতে যাব।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর বলেছেন, এ বিষয়ে ছাত্র, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা আমার সাথে কথা বলেছে। তাদের আমি শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি রোগীরা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য তাদের অনুরোধ করেছি।