২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

গৌরনদীতে চাচার ষড়যন্ত্রে দুই ভাতিজাকে হয়রানির অভিযোগ

আপডেট: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৫

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৩৯ বছর আগের বিতর্কিত দলিল ঘিরে উত্তেজনা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদী গ্রামে চাচার বিরুদ্ধে ৩৯ বছর আগের একটি বিতর্কিত দলিল বের করে দুই ভাতিজাকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত দলিলটির নম্বর ৫৯৬/৮৬। ভুক্তভোগী দুই ভাই হলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র।

 

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, টরকী বন্দর ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সুন্দরদী মৌজার ১০৪৫ নম্বর খতিয়ানের ১৯৩৪ নম্বর দাগে অবস্থিত ৮১ শতক জমির ওপর দীর্ঘদিন ধরে তাদের পৈতৃক বসতবাড়ি রয়েছে। জমিটির রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন হরিমোহন মিত্র ও কিশোরী মোহন মিত্র। পরবর্তীতে উত্তরাধিকার সূত্রে মনোরঞ্জন মিত্র জমিটির মালিক হন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর তিন ছেলে—ব্রজবিলাস মিত্র, স্বপন কুমার মিত্র ও নারায়ণ চন্দ্র মিত্র—ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে জমির মালিকানা পান।

 

ভাগ-বাটোয়ারার পর দুই ভাই জমি বিক্রি করে দিলে ব্রজবিলাস মিত্রের অংশে থাকা জমিতে মন্দির ও শ্মশান রয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে ব্রজবিলাস মিত্রের মৃত্যুর পর তাঁর দুই ছেলে রিপন ও সুমন মিত্র উত্তরাধিকার সূত্রে ওই জমির মালিক হন।

 

রিপন ও সুমন মিত্র জানান, ২০১০ সালে ব্যবসার প্রয়োজনে তারা ইসলামী ব্যাংক টরকী বন্দর শাখা থেকে ঋণ নেন। পরবর্তীতে তাদের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য আরও ঋণ নিতে বাধ্য হন। ঋণের চাপ বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা বসতঘরসহ ১৪ শতক জমি বিক্রি করে দেন। বর্তমানে তাদের কাছে মাত্র ৫ শতক জমি অবশিষ্ট রয়েছে, যেখানে একটি পুরোনো শ্মশান রয়েছে।

 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আশ্রয় সংকটে পড়ে তারা নতুন করে বসতঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিলে চাচা নারায়ণ চন্দ্র মিত্র বাধা দেন। পরে তিনি মন্দির ভাঙার অভিযোগ তুলে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন এবং সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ করেন। এর জেরে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত তৎপর হয়।

 

রিপন ও সুমন মিত্র দাবি করেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করে তারা মন্দির ভাঙার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেও নারায়ণ চন্দ্র মিত্র আদালতে মামলা করে জমির ওপর ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করান। এতে তারা বসতঘর নির্মাণ করতে না পেরে বর্তমানে ভাড়া বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

 

রিপন মিত্র বলেন,

 

“আমরা চাচার ষড়যন্ত্রের শিকার। প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম ও আদালতকে ব্যবহার করে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা এই অনৈতিক হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।”

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণ চন্দ্র মিত্র বলেন,

 

“ওই মন্দিরটি আমাদের পারিবারিক পুরোনো মন্দির। এটি দেবোত্তর সম্পত্তি নয়। আমি আমার বড় ভাই ব্রজবিলাস মিত্রের কাছ থেকে ১০ শতক জমি ক্রয় করেছি, যার বৈধ দলিল রয়েছে। জমি নিয়ে আমার দাবি আছে, মন্দির নিয়ে কোনো বিরোধ নেই।”

 

রিপন মিত্র আরও অভিযোগ করেন, প্রায় ৭–৮ মাস আগে রাতে তাদের কাছে একটি দলিলের ফটোকপি দেওয়া হয়। সেখানে দলিল নং ৫৯৬/৮৬ (তারিখ ১৬/০২/১৯৮৬) উল্লেখ করে ১০৪৫ খতিয়ানের ১৯৩৪ নম্বর দাগের ১০ শতক জমি বিক্রির কথা বলা হয়। তবে দলিলের বিভিন্ন পাতায় দাগ, খতিয়ান ও তফসিলের অসামঞ্জস্য রয়েছে এবং একটি পিট দলিলের নম্বরও নেই। তিনি দাবি করেন, এটি তার বাবার দেওয়া দলিল নয়; বরং দাদা মনোরঞ্জন মিত্র জীবিত থাকাকালীন (মৃত্যু ১৯৯০) তার নাম ব্যবহার করে একটি খাড়া দলিল তৈরি করা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে গৌরনদী ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

 

“এই দলিল দিয়ে কখনো মিউটেশন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মিউটেশন কেস ও দাগে গুরুতর জটিলতা রয়েছে।”

 

এ ঘটনায় এলাকায় চরম উদ্বেগ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network