২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

করোনায় কৃষকরাই যোগাচ্ছেন প্রকৃত ত্রাণ !

আপডেট: মে ৯, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

রাসেল হোসেন:

বৈশ্বিক মহামারি করোনা বেশ জেঁকে বসেছে বরিশালে। প্রিন্ট বন্ধ রয়েছে আমাদের দৈনিক দখিনের সময়সহ বরিশাল থেকে প্রকাশিত প্রায় সব পত্রিকা। দুই-একটা প্রিন্ট হয়, নামমাত্র। বন্ধ রয়েছে বরিশালের প্রায় সব সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের কার্যালয়। সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকে পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি। এই সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক হিসাবে সদস্যদের জানানোর পর এই করোনাকালে আর কোন দাপ্তরিক কাজ নেই।

চলমান লকডাউনে বরিশাল শহরের অদূরে লামচরী গ্রামের বাড়িতে আছি প্রায় দেড় মাস ধরে। এর মধ্যেই বেশ কয়েকদিন আগে বাড়ির পাশে থাকা ফসলি জমি থেকে প্রায় ২৫ রকমের শাক-সবজি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি। যা করেছি নিজের ভাল লাগা ও ফেসবুক বন্ধুদের ভার্চুয়াল প্রশান্তি দেওয়ার বাসনা থেকে। আপলোড দেওয়ার পর অনেকেই আরোও ছবি পোস্ট করার অনুরোধ জানান। আবার কেউ করোনা মুক্ত হলে লামচীরে এসব দেখতে আসার কথা বলেন। অনেকের অনুরোধের জন্য বা নিজের ভালো লাগার জন্য আরো ছবি তুলতে মাঠে যাই। এ সময় কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সাথে। তাদের সাথে কথা বলে মনে হল, এই করোনাকালে দেশে সত্যিকারের ত্রাণ কৃষকরাই দিচ্ছেন। কারণ এই করোনা মহামারিতে অন্য সব কিছুর দাম বেশি শুধু তাদের উৎপাদন করা ফসলের দামই কম। কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী, কেজি প্রতি কুমড়া পাঁচ টাকা, টমেটো, ঢেঁড়স, পুইশাক, রেখা, কয়লা ১০ টাকা। কৃষকের উৎপাদন করা সব কিছুর দামই অত্যন্ত কম। কেউবা আবার কম দামের ফলে মাঠ থেকে থেকে ফসল তোলেননি। দেখেছি আর ভংয়কর চিত্রও। পড়ে রয়েছে অনেক অনাবাদি বা পতিত জমি। স্থানীয় ভাষায় খিল।

ভেবে পাই না, সামনে কী আছে। বরিশাল শহরের চাহিদার সিংহভাগ শাক-সবজির যোগান দেয় এই লামচরী গ্রাম। চাষ হয় প্রায় ৫০ রকমের শাক-সবজি। নদী বেষ্টিত এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। যদিও গত দেড় যুগের নদী ভাঙলে পাল্টে গেছে মানচিত্র। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বহু কৃষি জমি। বিলীন হয়েছে অনেক ঘর-বাড়ি। এর মধ্যে আছে আমার দাদা বাড়িও। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।

এখন ভাবনা হচ্ছে আমার এই এলাকার কৃষি নিয়ে। লামচরী গ্রামে কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে অন্যতম হলো পাওয়ার টিলার। আছে এরও সংকট। ব্যক্তি মালিকানাধীন ৭/৮ পাওয়ার টিলার অলাভজনক অবস্থায় চালু আছে। এছাড়া অন্য কোনো আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি দেখা যায় না। এই গ্রামের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকতা বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তার মতেও জরুরি ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি পাওয়ার টিলার, পাওয়ার পাম্প, পাওয়ার ফ্রেশার ও ধান কাটার মেশিন সরবরাহ করা দরকার। বর্তমানে সরকারি বরাদ্দের পাওয়ার টিলার না থাকার কথা স্বীকার করে তাঁর দায়িত্ব পালনের সময় (৭-৮ বছরে) আটটি পাওয়ার টিলার দেয়ার কথা বললেও কৃষকদের তথ্যে পাঁচটির বিষয়ে কথ্য পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো বহু আগে ভাঙারি হিসাবে বিক্রি হয়ে গেছে।

এবার আসি কৃষি ঋণের প্রসঙ্গে। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক অনলাইন সভায় বলেছেন, সব মিলিয়ে ২৯ হাজার ১২৪ কোটি টাকার ঋণ ও প্রণোদনা পাবে দেশের কৃষক। এরই মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা চার শতাংশ সুদে ঋণ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে বর্তমান বাজেটে কৃষকের স্বার্থে সারসহ সেচকাজে বিদ্যুৎ বিলের রিবেট বাবদ কৃষি খাতে নয় হাজার কোটি টাকার ভর্ভুকি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অন্যদিকে নয় শতাংশ সুদের পরিবর্তে মাত্র চার শতাংশ সুদে কৃষককে ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ প্রণোদনা প্রদান করবে। কথা বা প্রশ্ন হলো আমার গ্রামেই তো দেখি কৃষকরা জানেই না বা বোঝে না যে তাদের জন্য প্রণোদনামূলক ঋণ ঘোষণা করছে। তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কী অবস্থা? তাই এসব শুধু প্রণোদনা বা বিশেষ ঋণ বাক্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ বদ্ধ না রেখে মূল কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হোক। তাহলেই করোনা পরর্বতী দুর্ভিক্ষের আশংকা থেকে মুক্ত থাকতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা চূড়ান্তভাবে সফল হবে।

লেখক: প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network