২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

হিজলায় অগ্নিদগ্ধে নিহত গৃহবধূ ইমা’র নতুন ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)

আপডেট: জুলাই ১, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

আসাদুজ্জামান ॥

বরিশালের হিজলায় গৃহবধূ ইমা হত্যা মামলার বিষয়ে নতুন কৌতুহলী তথ্য বের হচ্ছে। মৃত্যুর পূর্বে অগ্নিদ্বগ্ধের ঘটনার বিবরণ দিয়ে ইমার ৮ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা পাওয়া গেছে। ঐ ভিডিওতে অগ্নিদ্বগ্ধের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। সম্প্রতি এই ভিডিও নিয়ে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। অগ্নিদ্বগ্ধের কয়েকদিন পরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমার মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় বরিশালের হিজলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্ত করেছেন হিজলা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত)।
খোজ নিয়ে জানাযায়, গত ১১ জুন ইসরাত জাহান ইমা তার স্বামী মহসিন রেজা এর বাড়িতে অগ্নিদ্বগ্ধ হলে তাকে প্রথমে হিজলা থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সেখান থেকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে ১৮ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ইসরাত জাহান ইমার। এ ঘটনায় ২১ জুন ইমার বাবা সফিকুল ইসলাম মাসুম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ইমার স্বামী মহসিন রেজা ও তার পারিবারিক সূত্র জানায় গৃহবধূ ইমার মামা আরিফ এর ইটের ভাটা ‘বিবিসি ব্রিকস’ এ ব্যবসার জন্য ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে মহসিন রেজা। এছাড়াও অন্য একটি ব্যবসার জন্য ইমার স্বামী মহসিন তার শ্বশুরের মাধ্যমে প্রায় ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে। পারিবারিক সম্পর্ক মধুর থাকায় এই বিনিয়োগ করা হয়। ঢাকা হাসপাতালে ইমা মৃত্যুর পরে ইমার বাবা সফিকুল ইসলাম মাসুম ঢাকা শাহবাগ থানায় একটি লিখিত আবেদন দাখিল করেন। ঐ আবেদনে ইমার বাবা বলেন, তার মেয়ে দুর্ঘটনা বশত অগ্নিকান্ডে মারা গিয়াছে, কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। এই আবেদন করে বিনা পোস্টমটেমে মরদেহ পাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ঐ আবেদনের প্রেক্ষিতে গৃহবধূ ইমার মরদেহ বরিশালের হিজলায় নিয়ে দাফন করা হয়। কিছুদিন পরে ইমার বাবা বাদী হয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্যতম প্রতক্ষদর্শী স্বাক্ষী খোকন মুন্সি বলেন, ‘মহসিন ও তার স্ত্রী ইমা তিন তলায় থাকেন। আমরা একই ভবনের ২য় তলায় বসবাস করি। বিকেলে হঠাৎ আর্তচিৎকার শুনে আমি তিনতলায় যাই। সেখানে রান্নাঘরের পাশে অগ্নিদগ্ধ ইমাকে দেখে আমি পানি এনে তার গায়ে পানি ঢালি। মহসিনও তাকে বাঁচাতে চিৎকার ও পানির জন্য ছুটাছুটি করছিল। গুরুতর অগ্নিদ্বগ্ধ ইমাকে তার স্বামী মহসিন ও স্বজনরা দ্রুত অটোরিক্সা যোগে খুন্না হাসপাতালে নিয়ে যায়। জানাগেছে মৃত্যুর পূর্বে ভিডিওতে ইমা নিজেই অগ্নিদ্বগ্ধের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ইমা দাবী করেন, তিনি রান্না ঘরে কাজ করতে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তার শরীরে আগুন লেগেছে। প্রথমে ওড়নায়, পরে শরীরে আগুন ধরে যায়। তাকে বাঁচাতে তার স্বামীর আর্তচিৎকারের কথাও বলেন। স্বামীর সাথে তার মধুর সম্পর্কের কথাও বলেন ইমা। ইমার বাবা স্বামীকে ফাঁসাতে পারেন এমন ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন ইমা। এই ভিডিও বার্তা নিয়ে নানান মহলে মামলার বিষয়ে আলোচনা-সমালোচা চলছে।
মামলায় অভিযুক্তদের পরিবারের দাবি মহসিনের বিনিয়োগের প্রায় ৩০ লাখ টাকা নয়-ছয় করতেই মামলার সৃষ্টি হয়েছে। তারা পুলিশের কাছে, মামলাটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলে ইমার জামাতা মো: মহসিন রেজা, ও তার ভাই মোস্তফা ব্যাপারী, রেজার বাবা হাজী মো: দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী ও শাহানাজ কে আসামী করা হয়। ইমার শশুর হাজী দেলোয়ার হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
এ বিষয়ে হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ অসীম কুমার সিকদার প্রতিবেদককে বলেন, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও’র কথা শুনা যায়। মামলাটি ইন্সপেক্টর (তদন্ত) তদন্ত করছেন। মামলায় অভিযোগ প্রমানিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর তদন্তে কারও অপরাধ প্রমানিত না হলে তার হয়রানী হওয়ার সুযোগ নেই। মামলাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছেন। নিহত ইমার ভিডিও বার্তা পুলিশের হাতে পৌছেনি। সব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
ইমার স্বামী মহসিন রেজার পরিবারের দাবী, ইমার বাবার মাধ্যমে বিনিয়োগ করা প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা আত্মসাত করতেই দাফনের এতদিন পরে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছেন ইমার বাবা সফিকুল ইসলাম মাসুম। তাছাড়া ওই ভিডিওতে ইমা নিজেই বর্ণনা দেন, শরীরে আগুন লাগার কারণ। ইমা দাবী করেন, তিনি রান্না ঘরে কাজ করতে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তার শরীরে আগুন লেগেছে। প্রথমে ওড়নায়, পরে শরীরে আগুন ধরে যায়। তাকে বাঁচাতে তার স্বামীর আর্তচিৎকারের কথাও বলেন। স্বামীর সাথে তার মধুর সম্পর্কের কথাও বলেন ইমা। ইমার বাবা স্বামীকে ফাঁসাতে পারেন এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন ইমা নিজেই।
এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার অন্যতম স্বাক্ষী খোকন মুন্সি বলেন, ‘মহসিন-ইমা থাকে তিন তলায়। আমরা থাকি একই ভবনের ২য় তলায়। বিকেলে হঠাৎ মহসিনের আর্তচিৎকার শুনে আমি তিনতলায় যাই। সেখানে রান্নাঘরের পাশে অগ্নিদগ্ধ ইমাকে দেখে আমি বাথরুম থেকে পানি এনে তার গায়ে পানি ঢালি। মহসিনও তাকে বাঁচাতে দৌড়ঝাপ ও ডাকচিৎকার দিচ্ছিল। পরে গুরুতর ইমাকে অটোতে হাসপাতালে নিয়ে যায় মহসিন ও তার স্বজনরা’।
মহসিনের পরিবার জানায়, মূলত ইমা’র মামা আরিফ এর ইটের ভাটা ‘বিবিসি ব্রিকস’ এ ব্যবসার জন্য ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে মহসিন রেজা। তাছাড়া ইমার বাবার মাধ্যমে অন্য একটি জায়গায় আরো প্রায় ১৭ লাখ টাকা সহ মোট ত্রিশ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা আছে। এই টাকা আত্মসাতের জন্যই দাফনের এক সপ্তাহ পরে বুদ্ধি করে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছে ইমার বাবা মাসুম। মহসিনের পারিবারিক সূত্র আরো জানায়, এটি একটি দুর্ঘটনা। যা মহসিন ও ইমার বাবার পরিবার জানে। ঢাকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমার মৃত্যুর পর ইমার বাবা সফিকুল ইসলাম মাসুম নিজেই বিষয়টিকে দুর্ঘটনা উল্লেখ করে এতে তার কোন অভিযোগ নেই জানিয়ে ঢাকার শাহবাগ থানায় আবেদন করেন। এরপর ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন ও দোয়া মোনাজাতের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। স্বামী মহসিন রেজা ও তার পরিবার এবং ইমার বাবার পরিবার মিলেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করে। অথচ দাফনের প্রায় এক সপ্তাহ পরে এটিকে হত্যাকান্ড উল্লেখ করে মামলা করা হয়। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নিরপেক্ষ তদন্ত করলে একথার সত্যতা পাওয়া যাবে বলে দাবী মহসিনের পরিবারের।
মহসিনের পরিবারের এসব দাবীর কিছুটা সত্যতা পাওয়া যায় খোদ মামলার বাদী সফিকুল ইসলাম মাসুমের কথায়। তিনি বলেন, ‘মামলার কি অবস্থা তা আমি বলতে পারবোনা। কারন আমি মামলা মোকদ্দমা তেমন একটা বুঝিনা, এসব পরিচালনা করেন আমার ভাই’।
এদিকে মামলা দায়েরের পর গত সেমাবার কবর থেকে ইমার লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার দাফন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ মামলা তদন্তের অগ্রভাগে কাজ করছেন জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুর রহমান।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ জুন ইসরাত জাহান ইমা তার স্বামীর বাড়ীতে বসে রান্না ঘরে কাজ করছিলেন। এ সময় তার শরীরে আগুন লেগে যায়। সাথে সাথে স্বামী মহসিন রেজা সহ তার পরিবার প্রথমে স্থানীয় হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল পাঠিয়ে দেয়। সেখানের কর্তব্যরত ডাক্তার আশংকাজনক দেখলে তাকে ঢাকা শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে রেফার করেন। পরে ১৮ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ইসরাত জাহান ইমার।
নিহতের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় হাসপাতাল ও ঢাকার শাহাবাগ থানা পুলিশের কাছে লিখিত পত্র দিয়ে লাশ গ্রামের বাড়ী বরিশাল জেলার হিজলা থানাধীন মহিষখোলা গ্রাামে এনে মাটি দেওয়া হয়। অথচ ২১ জুন নিহতের বাবা শফিকুল ইসলাম মাসুম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে হিজলা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
error: এই সাইটের নিউজ কপি বন্ধ !!
Website Design and Developed By Engineer BD Network