আপডেট: অক্টোবর ১৬, ২০২৫
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৭ জন শিক্ষার্থী।
গত বছরের থেকে এ বছরে পাশের হার ও জিপিএ-৫ এর দিক থেকে এবারে বরিশাল বোর্ডের ফলাফল অনেকটা খারাপ হয়েছে। গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল চার হাজার ১৬৭ জন শিক্ষার্থী। বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ফলাফলের পরিসংখ্যান ঘোষণা করেন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী।
তিনি জানান, এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৫৯ হাজার ২৩৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ২৭ হাজার ৮৩৭ জন ও ছাত্রী ৩১ হাজার ৪০২ জন। পাস করেছে ৩৭ হাজার ৬৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৪ হাজার ৬৪২ জন ও ছাত্রী ২২ হাজার ৪২৪ জন।
বিভাগে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে বরিশাল জেলা। প্রতিবারের মতো এবারও এ শিক্ষা বোর্ডে ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা পাস ও জিপিএ’র হারে এগিয়ে।
গত বছর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৫। আর এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে ১৭৪টি। এদিকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ১২টি কলেজের কোন পরীক্ষার্থী পাস করেনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী। তিনি জানান, বোর্ডের ৩৪৯টি কলেজের ৩৭ হাজার ৬৬ শিক্ষার্থীরা ১৪৪টি কেন্দ্রে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ১২টি কলেজের কোন পরীক্ষার্থী পাস করেনি। আর মাত্র দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই অর্থাৎ শতভাগ পাস করেছেন। যে ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাশ করেনি তারমধ্যে বরগুনার ১টি, ভোলার ৪টি, বরিশাল জেলায় তিনটি, ঝালকাঠির দুটি ও পটুয়াখালী জেলায় দুটি কলেজে রয়েছে।
যারমধ্যে রয়েছে বরগুনার বামনার সরকারি সারওয়ারজান পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বরিশাল সদরের কমার্স কলেজ, বাবুগঞ্জের মোহনগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেহেন্দিগঞ্জের আন্ধারমানিক ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভোলার বোরহানউদ্দিনের দেলুয়া তালুকদার বাড়ি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লালমোহনের বালুরচর দালাল বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভোলা সদরের ভাষা শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় ও মেদুয়া কলেজ, ঝালকাঠির নলছিটির রাঙ্গাপাশা সেকেন্ডারি স্কুল ও কলেজ এবং আব্দুস সালাম কলেজ, পটুয়াখালী সদরের আউলিয়াপুর সাবিনা আক্তার হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দুমকি উপজেলার দুমকি নাছিমা কেয়ামত আলী মহিলা কলেজ।
এছাড়া ৫০ শতাংশের ওপরে পরীক্ষার্থী পাস করেছে ১৯৭টি কলেজে এবং ৫০ শতাংশের নিচে পরীক্ষার্থী পাস করেছে ১৩৮টি কলেজে।
এর মধ্যে ২০ শতাংশের নিচে ছয়টি, ১৫ শতাংশের নিচে ছয়টি এবং ১০ শতাংশের নিচে দুটি কলেজের পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।
এছাড়াও বরিশাল বোর্ডে পাসের হারের দিক থেকে এবারে সবার শীর্ষে রয়েছে বরিশাল জেলা। আর সবার নীচের অবস্থানে রয়েছে বরগুনা জেলা।
এ বছর গড় পাশের হারে বরিশাল জেলার অবস্থান রয়েছে সবার শীর্ষে। এ জেলায় মোট পাশের হার ৬৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পিরোজপুর জেলার পাশের হার ৬৪ দশমিক ৭৮।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভোলা জেলার পাশের হার ৬২ দশমিক ৯৮। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ঝালকাঠি জেলার পাশের হার ৫৮ দশমিক ৬৪, যা গত বছর ছিল ৮৯ দশমিক ২৭।
পঞ্চম অবস্থানে থাকা পটুয়াখালী জেলার পাশের হার ৫৭ দশমিক ৪৪ এবং ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা বরগুনা জেলার পাশের হার ৫১ দশমিক ৭৭।
অপরদিকে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশের হার সব থেকে বেশি এরপর ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের অবস্থান। জিপিএ-৫ এর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি পেয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা, এ বিভাগে মোট ৮০৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এছাড়া মানবিক বিভাগ থেকে ৭৭৭ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৯১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
অন্যদিকে পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা গতবছরের থেকে এবছর কমেছে। ২০২৪ সালে যেখানে গড় পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৮৫, সেখানে এবারে গড় পাসের হার ৬২ দশমিক ৫৭। আর গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ১৬৭ জন, আর এবারে পেয়েছে ১ হাজার ৬৭৪ জনে। যা গত বছরের থেকে প্রায় আড়াই হাজারটি কম।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ প্রফেসর জিএম শহীদুল ইসলাম জানান, বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় এবারেও ছেলেদের থেকে মেয়েরা ভালো ফলাফল করেছে। যেখানে পাস হারের ব্যবধান ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।
এদিকে ফলাফল ও জিপিএ-৫ এর দিক থেকে এবারে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগের পাসের হার সর্বোচ্চ ৭১.৫৮। আর এ বছর বিজ্ঞান থেকে মোট সর্বোচ্চ ৮০৬ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ৪৮২ জন মেয়ে পেয়েছে জিপিএ-৫। এছাড়া ৩২৪ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
অপরদিকে মানবিক বিভাগে পাসের হার ৬০.২১ এবং এ বিভাগ থেকে মোট ৭৭৭ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ৬৬৬ মেয়ে এবং মাত্র ১১১ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৬২.০৪ এবং এ বিভাগ থেকে ৯১ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ৬৯ জন মেয়ে এবং ২২ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এদিকে তিন বিভাগে পাসের হার মিলিয়ে দেখা যায় মেয়েরা ৭১.৪১ শতাংশ পাস করেছে, যেখানে ছেলেদের পাসের হার ৫২.৬০। আর সংখ্যায় হিসেব কষলে ২২ হাজার ৪২৪ জন মেয়ে এবং ১৪ হাজার ৬৪২ জন ছেলে পাস করেছে। উল্লেখ্য, এ বছর ১৪৪টি কেন্দ্রে ৩৪৯টি কলেজের ৬১ হাজার ৪৮১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশগ্রহণ করে ৫৯ হাজার ২৩৯ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৩৭ হাজার ৬৬ জন। এছাড়া এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৪ জন মেয়ে ও ১৮ জন ছেলে পরীক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে অসদুপায় অবলম্বন করায় বহিষ্কার করা হয়েছে।