আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২৫
মেহরাজ রাব্বি।। বরিশালের মিডিয়া অঙ্গনে চলছে এক অদ্ভুত খেলা। ম্যানেজ সাংবাদিকতা। যে দপ্তরে গিয়ে বলবে অমুক ভাই পাঠাইছে তার জন্য দরজা খোলা, আর যার পেছনে কেউ নেই, তিনি থেকে যান গেটের বাইরে। সাংবাদিকতার নামে যেন চলছে এক বিশেষ শ্রেণির ম্যানেজ রাজনীতি, যেখানে পেশার নীতি নয়, বরং ‘চিরকুট’ আর ‘চাকরি বাঁচানো’ই মূলনীতি।
সিনিয়র ভাই মানেই আইন?
বছরের পর বছর ধরে কিছু “আওয়ামী এজেন্ডাধারী সাংবাদিক” সরকারি দপ্তরগুলোকে এমনভাবে জিম্মি করে রেখেছেন, যেন সেটা কোনো ব্যক্তিগত ফার্ম। তারা এমন এক নায়কতান্ত্রিক ম্যানেজ সিস্টেম তৈরি করেছেন, যেখানে সত্যের জায়গা সংকুচিত, আর সিনিয়র ভাইয়ের ফোন বা চিরকুটই আইন।
এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে সাংবাদিকতার মূল চর্চা নয়, বরং ‘কার কার সঙ্গে সম্পর্ক’, সেটাই এখন কাজ পাওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি। কে প্রেসক্লাব সভাপতির ভাই, কে কার রাজনৈতিক আত্মীয়, কে কোন সিনিয়রের ছায়ায়, এসব পরিচয়েই এখন সাংবাদিকতার পরিচয় নির্ধারিত হচ্ছে।
নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত, সাহসী কণ্ঠ নিস্তব্ধ…
নতুন বা শিক্ষানবিশ সাংবাদিকরা আজ বিভ্রান্ত। তারা দেখে, যোগ্যতা নয়, সম্পর্কই সাফল্যের চাবিকাঠি। কেউ প্রতিবাদ করলে শোনা যায়, “ও নেগেটিভ লিখে”, “ওর অভিমান আছে” বা “ও গ্রুপবিহীন”। অথচ বিষয়টা অভিমান নয়, এটা দায়িত্ববোধ, পেশার প্রতি সততা।
বরিশালের মিডিয়া হাউসগুলোর অনেক জায়গায় এখন একধরনের ‘গোপন বাজারব্যবস্থা’ চলছে, যেখানে নিউজ নয়, বরং সম্পর্ক, সুবিধা ও কমিশনের হিসাব চলে।
সাংবাদিকতার মূল শিক্ষা ভুলে গেছি আমরা…
আজ এমন অবস্থা যে, কেউ কেউ “NEWS”-এর পূর্ণরূপই জানেন না, অথচ নিজের নামের পাশে “সিনিয়র রিপোর্টার” লিখে গর্ব করেন! সাংবাদিকতার মূল শিক্ষা ছিল, নিরপেক্ষতা, অনুসন্ধান, সাহস আর নিজের পরিচয়ে দাঁড়ানো। এখন সেটা বদলে গেছে, চাটুকারিতা, তোষামোদ আর সুবিধাভোগই যেন সাংবাদিকতার সংজ্ঞা।
অপ-সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান…
আমি বরিশালের সেইসব অপ-সাংবাদিক, চাঁদাবাজ সাংবাদিক, হ্যানিট্রাপ সাংবাদিক, জিম্মি সাংবাদিক, আর পেটিকোট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কলম চালিয়ে যাচ্ছি, কারণ এরা সাংবাদিক নয়, বরং পেশার মুখোশধারী সুবিধাভোগী। এরা অফিসে যায় চাঁদার খাতা নিয়ে, নিউজ নয়। এরা জনগণের কণ্ঠ নয়, বরং ‘ম্যানেজ সিস্টেম’-এর কর্মচারী। এদের প্রতিহত করতে হবে,ছোট-বড় সবাইকে, সিনিয়র-জুনিয়র ভেদাভেদ ভুলে।
মেরিট ফেরত দাও সাংবাদিকতায়…
আজ সময় এসেছে বলার, ২৪ শে ফ্যাসিস্ট বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়ের মাধ্যমে আমরা বাক-স্বাধীনতা পেয়েছি তাই, সাংবাদিকতা কোনো ‘ম্যানেজ প্রজেক্ট’ নয়, এটা জাতির বিবেকের জায়গা। আমাদের নতুন প্রজন্মকে শিখতে হবে, সাংবাদিকতার শ্রদ্ধা পাওয়া যায় কাজের মাধ্যমে, না কারও ছত্রছায়ায়। সিনিয়র ভাইয়ের প্রভাব নয়, নিজের সততা ও যোগ্যতা দিয়েই সম্মান অর্জন করতে হয়।
শেষ কথা…
বরিশালের মিডিয়া অঙ্গনে এখন একটাই স্লোগান তোলার সময় এসেছে,“ম্যানেজ নয়, মেরিট ফেরত দাও সাংবাদিকতায়!”যেদিন সাংবাদিকরা নিজের পরিচয়ে দাঁড়াতে শিখবে, সেদিনই বরিশালের মিডিয়া মুক্ত হবে ম্যানেজতন্ত্রের অভিশাপ থেকে।